উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য অন্তত যাতে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা যখন পরীক্ষা দিতে যাবে, বিশেষত ২, ৪ ও ৫ এপ্রিল সমস্ত দলকেই সংযত ভাবে প্রচার করতে হবে।
—ফাইল চিত্র।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন)-এর জন্য এক বার দিন পাল্টেছে আগেই। এ বার রাজ্যে দুই বিধানসভা কেন্দ্রে (বালিগঞ্জ ও আসানসোল) উপনির্বাচনের কারণে ফের দিন বদলাল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার।
বৃহস্পতিবার নবান্নে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নতুন সূচি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সূচি অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরু ২ এপ্রিল থেকে। যেমনটা আগে ছিল। সে দিন প্রথম ভাষার পরীক্ষা হবে। কিন্তু এ দিন ঘোষিত দিনক্ষণ অনুযায়ী, পরীক্ষা শেষ হবে ২৭ এপ্রিল। আগের সূচিতে যা হওয়ার কথা ছিল ২৬ এপ্রিল। সমস্ত পরীক্ষার সময়ই সকাল ১০টা থেকে দুপুর সওয়া ১টা। পাল্টে গিয়েছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের দিনও। ওই পরীক্ষা হবে ৩০ এপ্রিল। আর একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষাও হবে ২ থেকে ২৭ এপ্রিল। রুটিন উচ্চ মাধ্যমিকের সঙ্গে একই। তবে পরীক্ষার সময় দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন ১২ এপ্রিল। কিন্তু তার আগে ভোটের প্রস্তুতির নানা কাজ থাকে স্কুলে। তাই ২, ৪ ও ৫ এপ্রিলের পরের পরীক্ষা ১৬ এপ্রিলে। ৬ থেকে ১৫ এপ্রিল কোনও পরীক্ষা নেই। আবার উচ্চ মাধ্যমিক চলাকালীন জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন)-এর পরীক্ষা রয়েছে ২১, ২৪ এবং ২৫ এপ্রিল। তাই তা বাদ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের দিন ঠিক করা হয়েছে। যাতে জয়েন্টে বসতে পড়ুয়াদের অসুবিধা না হয়।
তবে এ ভাবে উপনির্বাচনের জন্য পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন’ মুখ্যমন্ত্রী। মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীরা যে স্বস্তি পান, তা তিনি বোঝেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার খারাপ লাগছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।... আপনাদের পরীক্ষা বার বার পিছোতে হচ্ছে বলে, আমার নিজের খারাপ লাগছে।’’
তবে পরীক্ষার্থীদের এই ‘অসুবিধার’ জন্য নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছেন মমতা। প্রশ্ন তুলেছেন, উচ্চ মাধ্যমিকের মধ্যেই হঠাৎ উপনির্বাচন কেন? তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার চিঠি লিখেছিল নির্বাচন কমিশনকে। ছ’মাসের মধ্যে ভোট যদি করতেই হয়, তা হলে পাঁচ রাজ্যের (বিধানসভা ভোটের) সঙ্গেই করে নিতে পারত। দফায় দফায় বিজেপির কথায় নির্বাচন করছে! ওই সময়ে অন্নপূর্ণা পুজো, পয়লা বৈশাখ, অম্বেডকর জয়ন্তী আছে। নিজেদের ইচ্ছেমতো তারিখ দিয়েছে।”
বিজেপির কথায় কমিশনের চলার অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “কোভিডের মধ্যে যখন ভবানীপুরে উপনির্বাচন পিছোতে বলেছিলাম, তখন তো কমিশন আমাদের কথা না শুনে ওঁর কথাতেই ভোট ঘোষণা করেছিল। তার পরেও উনি বলবেন যে, কমিশন বিজেপির কথায় চলে!”
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “উপনির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে শুরু করবে। তারা স্কুলে থাকবে। আবার স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের সিটও পড়বে। এক সঙ্গে কী করে দু’টি জিনিস চলবে? এই বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনের।’’
তবে উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য অন্তত যাতে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা যখন পরীক্ষা দিতে যাবে, বিশেষত ২, ৪ ও ৫ এপ্রিল সমস্ত দলকেই সংযত ভাবে প্রচার করতে হবে। পরীক্ষার দিনগুলির আগের রাতের রাজনৈতিক সভা একটু তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় কি না, তা-ও দেখতে হবে বলে জানান তিনি।
পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘‘কিছুটা ‘গ্যাপ’ দিয়ে রুটিন করা হয়েছে। প্রথম তিন দিনের পরীক্ষার পরে মাঝে একটা ‘গ্যাপ’ আছে। তখন অঙ্ক, রসায়ন-সহ নানা বিষয়ের প্রস্তুতি নেবেন। জয়েন্টের প্রস্তুতি নেবেন। নতুন সূচিতে মাত্র এক দিন বাড়িয়েছি। অনেকগুলি গ্যাপ রেখেছি। যাতে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতিতে সুবিধা হয়।’’ উপনির্বাচনের গণনার দিন অবশ্য পরীক্ষার মধ্যে পড়লে, অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেই মনে করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘গণনা তো দু’তিনটি পোলিং সেন্টারে হয়। যে স্কুলে পরীক্ষা, সেখানে গণনা করবে না। দূরে করবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৭ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৮৮ জন। ছাত্র ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪০০। আর ছাত্রী ৪ লক্ষ ৫ হাজার ১৮৮। মোট পরীক্ষা কেন্দ্র ৬৭২৭টি।