সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে আরও কঠোর বিধির কথা আগাম শুনিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃতীয় ঢেউয়ে অতিমারি যে-ভীষণ রূপ ধরেছে, তাতে আগামী ১৫ দিন যে খুব কঠিন সময়, তা মেনে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পরিস্থিতি বুঝে ‘আরও কড়া’ নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রয়োগ করতে পারে সরকার। সেই সঙ্গেই তাঁর আশ্বাস, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামো পর্যাপ্ত। প্রশাসনের সর্বস্তর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (দক্ষিণ) থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্তা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণের কবলে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দুই চালক এবং সহকারীও। এই অবস্থায় আর্থিক গতিবিধি যথাসম্ভব চালু রেখেই গত রবিবার নতুন নিয়ন্ত্রণ বিধি বলবৎ করেছে সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী কার্যত মিলিয়েই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ। এই অবস্থা যে আরও কিছু দিন চলবে, সেই বিষয়ে খুব একটা ধন্দে নেই প্রশাসন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামী ১৫টা দিন খুব কঠিন। এই সময়ে খুব সাবধানে থাকতে হবে। সবাই সুস্থ থাকুন এবং কোভিড বিধি ও পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন। সংক্রমণ আরও বাড়লে আরও কড়া বিধিনিষেধ জারি হতে পারে।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, আশঙ্কা বজায় থাকবে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই। ২২ তারিখে চারটি পুর নিগমের ভোট হওয়ার কথা। সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিধি বলবৎ থাকবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে আরও কঠোর বিধির কথা আগাম শুনিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, “মেলামেশা করতে বারণ করছি। কারণ, আমি নিজেই জানি না, কার কার কোভিড হয়েছে। ইউকে (ব্রিটেন) থেকে অনেকে এসেছেন। একটা বিমানে তিন-চারশো লোক থাকে। এক জনের হওয়া মানে সকলের হওয়া। এ ভাবেই ছড়িয়েছে। সকলকে বলব, দয়া করে মাস্ক, গ্লাভস, হাতশুদ্ধি ব্যবহার করুন এবং মাথা ঢাকার ব্যবস্থা করুন। ভয় পাবেন না।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, রাজ্যের সীমানায় আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে গোটা দেশেই। তাই ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মানুষদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে ওমিক্রন-আতঙ্ক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, কোভিডের এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসকে হালকা ভাবে নেওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়।
কোভিডের প্রথম তরঙ্গ থেকেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছিল। সাধারণ কোভিড শয্যার পাশাপাশি সিসিইউ বা এইচডিইউ শয্যাও প্রস্তুত আছে রাজ্যে। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রস্তুত আছেন। প্রশাসন জানাচ্ছে, সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুস্থতার হারও। মৃত্যুহার এখন ১.১৮%। মমতার কথায়, “এ বারের কোভিডটা বয়স্ক বা কোমর্বিডিটি থাকা মানুষ ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে ততটা মারাত্মক নয়। জ্বর থাকছে তিন-পাঁচ দিন। তাই কেন্দ্রীয় সরকার সাত দিনের বিচ্ছিন্নবাসের পরামর্শ দিয়েছে। আমি চাই না, অফিসারেরা আক্রান্ত হোন। এখন বাড়ি থেকে কাজ করাই ভাল। টিকার দ্বিতীয় ডোজ়ই শেষ হয়নি ৪০ শতাংশ লোকের। যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় নেননি, তাঁরা তা নিয়ে নিন।”
আজ, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। চলতি পরিস্থিতিতে তিনি নবান্নের পরিবর্তে বাড়ির কার্যালয় থেকেই সেই বৈঠকে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা।