মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহুয়া মৈত্র। — ফাইল চিত্র।
দীর্ঘদিন পরে সাংবাদিক বৈঠক করলেন। তবে মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গে নীরবই রইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, মমতা যখন তাঁর কালীঘাটের বাড়ির লাগোয়া দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করছেন, তখনই দিল্লিতে লোকসভার এথিক্স কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই কারণেই মহুয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী।
বৃহস্পতিবার দ্বাদশীর সাতসকালে মমতার মন্ত্রিসভার সহকর্মী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই সূত্রেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই তল্লাশির কড়া বিরোধিতা করার পাশাপাশি বিভিন্ন নীতির প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন মমতা। তবে তাঁর বক্তব্যে মহুয়া প্রসঙ্গ আনেননি তিনি। তৃণমূলের প্রথমসারির নেতাদের একাংশের বক্তব্য, এর কারণ দু’টি। প্রথমত, লোকসভার এথিক্স কমিটি বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে। নীতিগত ভাবে সেই সময়ে মমতা ওই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। দ্বিতীয়ত, তিনি মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশি নিয়ে। দলীয় নেত্রী হিসেবে তিনি ওই সাংবাদিক সম্মেলন করেননি।
প্রসঙ্গত, মহুয়াকে নিয়ে প্রথম থেকেই মেপে পা ফেলছে তৃণমূল। গত ১৪ অক্টোবর আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই প্রথম মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লেখেন সিবিআইকে। সেখানে তিনি দাবি করেন, দুবাইয়ের শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির থেকে অর্থ ও উপহার নিয়ে সংসদে মহুয়া আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই চিঠি প্রকাশ্যে আসে ১৫ অক্টোবর। সেই দিনই জয়ের চিঠির ভিত্তিতে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লেখেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাতে বলা হয়, হীরানন্দানির হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে হেনস্থা করাই ছিল মহুয়ার লক্ষ্য। দ্রুত তদন্ত করে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে সরানোর দাবিও জানান নিশিকান্ত। স্পিকার ওই অভিযোগ লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে পাঠান। সেই কমিটি বৃহস্পতিবার তাদের কাজ শুরু করেছে।
তবে এর মাঝে এক্স হ্যান্ডেলে আদানি গোষ্ঠী, বিজেপি এবং সিবিআইকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মহুয়া। পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন নিশিকান্তও। এ সবের মধ্যেই হলফনামা দিয়ে শিল্পপতি হীরানন্দানি মহুয়ার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, সংসদে প্রশ্ন তোলার জন্য অর্থ এবং উপহার দেওয়া, মহুয়ার সংসদের লগইন, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা ইত্যাদি বিষয় স্বীকার করে নেন। কিন্তু গোড়াতেই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলে দেন, ‘‘এ বিষয়ে দলের কোনও বক্তব্য নেই। এটাই তৃণমূলের অবস্থান।’’ এর পরে বিতর্ক গড়াতে থাকলে কুণাল একই ভাবে বলেন, ‘‘যাঁকে কেন্দ্র করে বিষয়টি, তিনিই ভাল বলতে পারবেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এই নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই।’’
তবে সম্প্রতি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘‘মহুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছে দল। মহুয়া ইতিমধ্যেই তা করেছেন। যে হেতু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন এক জন নির্বাচিত সাংসদ, তাই এ নিয়ে আগে তদন্ত করুক সংসদীয় প্যানেল। তার পরেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে দল।’’ এরই পাশাপাশি কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, “মহুয়া যে হেতু বেশি ভোকাল, তাই এ রকম করা হচ্ছে। আমি ওর পাশে আছি।” একই সঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘দলের কী অবস্থান আমি জানি না। আমি তো দলের মুখপাত্র নই। আমি মনে করি, মহুয়া যেহেতু মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে, তাই ওকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা।’’ প্রসঙ্গত, মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তাঁর বক্তব্য, সংসদে আদানিকে আক্রমণ করা হলেই বিজেপি সংশ্লিষ্ট সাংসদকে য়ে কোনও প্রকারে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। একই কারণে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছিল।