মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কলকাতা ও শহরতলিতে পরপর নিঃসঙ্গ প্রবীণ-প্রবীণা খুনের ঘটনায় জমি দখল চক্রের দিকে আঙুল উঠছে। এই অবস্থায় অসাধু প্রোমোটার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার অদূরে সোনারপুর ও নেতাজিনগরে দুই প্রৌঢ় দম্পতির খুনের ঘটনা মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এসেছে। এই নিয়ে উদ্বেগ ও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সর্বত্র। দু’টি ক্ষেত্রেই জমিজমা সংক্রান্ত টানাপড়েন খুনের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার নবান্নে বলেন, ‘‘দু’টি পরিবার মারা গিয়েছে। কী হয়েছে না হয়েছে, তা পুলিশকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে বলেছি। বিস্তারিত ভাবে। কড়া পদক্ষেপ করা হবেই। একটা নির্দেশ পুলিশকে আমি দিয়েছি। কেউ যদি মনে করে থাকে, বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী একা থাকেন, তাদের দেখার কেউ নেই। ফলে তাদের খুন করে জায়গাটা দখল করা যাবে, এটা হবে না।’’ মমতার নির্দেশ, নেতাজিনগরে যে-বাড়িতে প্রৌঢ় দম্পতি খুন হয়েছেন, সেখানে তাঁদের নামে স্তম্ভ তৈরি করতে হবে। ‘‘কেউ যাতে সেই জায়গায় যাতে হাত দিতে না-পারে, দখল করতে না-পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও মহানগরে এবং উপকণ্ঠে বেশ কয়েক জন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধবৃদ্ধা খুন হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাকা, গয়না এবং জমি হাতানোর জন্য হত্যার রাস্তা বেছে নেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অসাধু প্রোমোটার চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার মনে করে, এলাকায় এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরদারি থাকলে এমন ঘটনা আটকানো অনেকটাই সম্ভব। ‘‘পাড়ার নাগরিকদেরও এটা দেখা কর্তব্য। আমি পুলিশকেও নির্দেশ দিয়েছি। কড়া পদক্ষেপ করা গেলে তবেই এটা আটকানো যাবে। পঞ্চায়েত বা পুরসভা যা-ই হোক, সবই তো এক ছাতার তলায় কাজ করে। এদেরও দেখতে হবে। এ-সবে মদত দেওয়া যাবে না,’’ বলেন মমতা।
শহরের প্রবীণদের নিরাপত্তা জোরদার করতে এ দিন লালবাজারে পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। শহরের বয়স্কদের জন্য সংস্থা গড়ে আগে থেকেই কাজ করছে কলকাতা পুলিশ। ‘প্রণাম’ নামের সেই সংস্থাকে কী ভাবে আরও সক্রিয় করা যায়, সেই বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এ দিনের বৈঠকে। প্রবীণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কলকাতার প্রতিটি থানায় ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ (এসওপি) বা আদর্শ কর্তব্যবিধি চালু করেছে লালবাজার। শহরের বয়স্ক নাগরিকেরা বিপদে পড়লে পুলিশকে ফোন করে (৯৮৩০০৮৮৮৮৪) তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। শহরে একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ঠিকানা সংগ্রহ করে কলকাতা পুলিশের তরফে একটি ‘ডেটাবেস’ বা তথ্য ভাণ্ডার গঠন করা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, কোথাও কোথাও একা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা সন্তান ছাড়াই প্রবীণেরা থাকেন। সেই সব তথ্য সংগ্রহ করে আলাদা সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। সিসি ক্যামেরা বসানো হবে প্রবীণদের বাড়ির সামনে। বড় কোনও বিপদ হলে বাড়িতে থাকা একাকী বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা যাতে আপৎকালীন ঘণ্টা বাজাতে পারেন, সেই জন্য আলাদা সুইচের ব্যবস্থা করা হবে প্রতিটি বাড়িতে। ১৫ দিন অন্তর পুলিশকে এলাকার প্রবীণ-প্রবীণদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, সব ডিভিশনের অধীনে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারেরা (এসি) প্রবীণদের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।