(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ বাংলায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু বাংলা ছুঁয়েই রাহুল চলে গিয়েছেন দিল্লি। দু’দিনের বিরতির পর রবিবার আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা থেকে ফের শুরু হওয়ার কথা তাঁর কর্মসূচি। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পৌঁছবেন কোচবিহারে।
কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের এখন যা সম্পর্ক, তাতে একই দিনে দুই শিবিরের দুই প্রধান নেত্রী এবং নেতা উত্তরবঙ্গে উপস্থিত থাকলে রাজনীতির পারদ চড়বে। বুধবার থেকেই নাম না করে কংগ্রেসকে রাজনৈতিক আক্রমণ শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বাংলায় জোট না হওয়ার জন্য প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে দায়ী করেছেন। রাহুল যখন উত্তরবঙ্গে থাকবেন, তখন তাঁর সঙ্গে অধীর বিলক্ষণ থাকবেন। সেই প্রশ্নে মমতা এবং তৃণমূলের অবস্থান কী হয়, তা-ও বিভিন্ন দলের কাছে বিবেচ্য হবে।
রবিবার রাহুলের ফালাকাটা থেকে যাত্রা শুরু হবে গাড়িতে। ভায়া ময়নাগুড়ি তিনি পৌঁছবেন জলপাইগুড়ি শহরে। সেখানকার পিডব্লিউডি মোড় থেকে পদযাত্রা করে রাহুল পৌঁছবেন কদমতলা চকে। দুপুরে গাড়িতে করে ৩ কিলোমিটার দূরে এবিপিসি গ্রাউন্ডে ঘুরবেন। তার পর যাত্রা শুরু জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ফাটাপুকুর থেকে। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ফাটাপুকুর থেকে সোজা শিলিগুড়ি থারান মোড়। সেখান থেকে গাড়িতে এয়ারভিউ মোড়। সেখানে সভা হবে। তার পরে বিহার মোড় হয়ে নকশালবাড়ি। রাতে রাহুলের থাকার কথা উত্তর দিনাজপুরের সোনাপুরে। পরদিন ২৯ জানুয়ারি, সোমবার চোপড়া থেকে রাহুলের যাত্রা শুরু। ১২ কিমি তিনি গাড়িতে ঘুরবেন। সেখান থেকে সোজা কিসানগঞ্জ। সেখান থেকে বিহার ঢুকবেন রাহুল। বিহার থেকে রাহুল মালদহ আসবেন ৩১ তারিখে।
সেই একই সময়ে উত্তরবঙ্গে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। বৃহস্পতিবার আলিপুরের ধনধান্য স্টেডিয়ামে ‘খেলাশ্রী’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরের বিস্তারিত সূচি জানান। মমতা জানিয়েছেন, ২৮ তারিখ অর্থাৎ রবিবার তিনি কলকাতা থেকে কোচবিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। সে দিন হাসিমারায় পৌঁছে সেখানেই রাত্রিবাস করবেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার হাসিমারা দিয়েই অসম থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছিল রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’। সোমবার কোচবিহারে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে চলে যাবেন রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গের সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’য়। সোমবার ‘উত্তরকন্যা’য় রাত্রিবাস করে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে সরকারি পরিষেবা প্রদান করবেন মমতা। তার পর একে একে বালুরঘাট (দক্ষিণ দিনাজপুর), মালদহ, মুর্শিদাবাদ হয়ে কৃষ্ণনগরে (নদিয়া) এসে শেষ হবে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘২৮ তারিখ আমি বেরবো। শেষ করব ১ ফেব্রুয়ারি। সেটা ২ তারিখও হয়ে যেতে পারে। জেলাশাসকেরা নির্দিষ্ট সূচি জানিয়ে দেবেন।’’
অনেকেরই কৌতূহল, বাংলায় যখন কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিহ্ন, তখন রাহুলের যাত্রার সময়েই প্রশাসনিক সফর করে মমতা কি তাঁকে ‘বার্তা’ দিতে চাইলেন? তবে মমতা বলেছেন, ‘‘আমার সূচি ১৫ দিন আগেই ঠিক ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে তা আগে বলা যায়নি।’’ প্রশাসনিক সূত্রেও তেমনই খবর মিলেছে। যে সূচি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল।
তবে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে অনেকের মনে হওয়ার অবকাশ রয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সম্পূর্ণ নির্ঘণ্ট এখনও প্রস্তুত হয়নি। যে কারণে মমতাও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, কবে শেষ হবে তাঁর এই দফার উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণের সফর। ১ না ২ ফেব্রুয়ারি। মুখ্যমন্ত্রীর এই জেলাসফর রাজনৈতিক ভাবে অন্য কারণেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তার কারণ মমতা যাবেন বালুরঘাট এবং মুর্শিদাবাদে। যথাক্রমে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের এলাকায়। ফলে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি হলেও সেই মঞ্চ থেকে মমতা কী রাজনৈতিক কথা বলেন, সে দিকেও নজর থাকবে।
এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে। ৩০ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষার জন্য মাইকবিধি বলবৎ হয়ে যাবে সারা রাজ্যে। মমতা জানিয়েছেন, ওই সময়ে তাঁর যা কর্মসূচি হবে, তা কোনও হল বা ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মতো ঘেরা জায়গায় হবে। যাতে পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা না হয়।