৪৬তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সমালোচনা শুনতে তাঁর কেমন লাগে, ৪৬তম বইমেলার উদ্বোধনে এসে সে জবাবই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সমালোচনা থেকে শিখি।’’ সোমবার ‘বইমেলা প্রাঙ্গণ’-এ বইমেলার উদ্বোধন করলেন মমতা। এই প্রথম বার সল্টলেকের বইমেলা প্রাঙ্গণে বসল মেলা, যার নামকরণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘বইমেলা তার নিজস্ব ঠিকানা পেল।’’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন স্পেনের মন্ত্রী মাকিয়া খোসে গালভেজ সালভাদোর, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
বর্তমানে নানা কারণে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় জেলায় বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ‘দিদির দূত’-রা। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির কাঁটা রয়েইছে। গত শনিবার, ২১ জানুয়ারি এই দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। ফলে সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। এমন সময় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার বা কোনও ব্যক্তিই যে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, সেই বার্তাটিই কৌশলে দিতে চাইলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ। কুৎসার আঙিনায়, অপপ্রচারের আলিঙ্গনে কোথাও কোথাও কারও কারও পছন্দ না-ও হতে পারে। আমি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই।’’ মমতা এ-ও জানালেন যে, এই সমালোচনা থেকে তিনি শিক্ষা নেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও কোথাও সমালোচনা শুনলে খুশি হই। কারণ সমালোচনা থেকে শিখতে পারি। তার থেকে বড় জিনিস আর কী হতে পারে? যে তোমায় খারাপ বলে বলুক, তুমি বোলো না। এটাই আমাদের শিক্ষা।’’
এই প্রথম নির্ধারিত জায়গায় বসল বইমেলা। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘‘আমার দীর্ঘ ইইদিনের পরিচিত, যখন সরকারে ছিলাম না তখন থেকে পরিচয় সুধাংশুদার (সুধাংশুশেখর দে, গিল্ডের সভাপতি) সঙ্গে। তাঁরা বইমেলার জন্য একটু জায়গা চেয়ে বেড়াতেন। একটু জায়গা দাও, একটু জায়গা দাও। এ বার সেই স্থায়ী জায়গা পেল বইমেলা।’’ তিনি জুড়ে দেন, ‘‘কয়েকটা স্টল দেখে একটা জিনিসই মনে হল প্রথমে। এখানে করার ফলে আকর্ষণ যেমন বেড়েছে, জায়গাও বেড়েছে। অনেকটা জায়গা। এটা কিন্তু বড় কৃতিত্ব। যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন, সেখানে জায়গা না থাকলে গুঁতোগুঁতি হয়ে যায়।’’
মমতা জানান, অতিমারির সময়েও গত বছর ভাল ব্যবসা করেছিল বইমেলা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ২৩ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। ২৩ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। এ বার তো কথাই নেই।’’ এখন বইমেলায় অন্য রাজ্য থেকেও মানুষ আসেন, সে কথাও জানালেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘আগে অন্য রাজ্যের লোকেরা ভাবতেন, আমাদেরও তো মেলা হয়। এ বার তাঁরা অভিনন্দন জানাচ্ছেন। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকেও মানুষ আসছেন। আপনারা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছেন।’’ লিটল ম্যাগাজিনের মূল্যও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ছোট কয়েক পাতার লিটল ম্যাগাজিনও কম নয়। তার মধ্যে অনেক তথ্য থাকে।’’
এর পর মমতা নিজের বইয়ের খতিয়ানও দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তাঁর ১২৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই বছরও আমি ছ’টি বই দিচ্ছি। চার-পাঁচটি বইয়ের প্রসেস চলছে। পরের বছর আসবে।’’ ভাষণের মাঝে বইমেলায় উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু এবং স্পেনের মন্ত্রী মারিয়াকেও। সোমবার বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে।
এ বারের বইমেলার থিম স্পেন। এই প্রথম অংশগ্রহণ করছে তাইল্যান্ড। বইমেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে প্রায় ৭০০ ছোট-বড় বইয়ের স্টল, ২০০টি লিটল ম্যাগাজিন। এ বছর প্রথম বার অংশ নিয়েছেন অনেক নতুন ছোট-বড় প্রকাশক। বইমেলায় ঢোকা এবং বার হওয়ার জন্য থাকছে ন’টি ফটক। একটি দরজা হয়েছে স্পেনের তোলেদো গেটের আদলে। বাকি তোরণের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববাংলা গেট এবং শতবর্ষ উপলক্ষে অগ্নিবীণা গেট।
এ বার মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং প্যারীচরণ সরকারের দ্বিশত জন্মবর্ষ। সে কারণে তাঁদের নামেই বইমেলার দু’টি প্রেক্ষাগৃহের নাম রাখা হয়েছে।লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন হবে লেখক-সম্পাদক রমাপদ চৌধুরীর নামে। এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। মৃণাল সেন এবং তরুণ মজুমদারের নামে দু’টি মুক্তমঞ্চও থাকছে। বইমেলায় যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাস চালাবে রাজ্য পরিবহন দফতর। এ বার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চেপেও আসা যাবে বইমেলায়।