মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
জাতীয় শিক্ষানীতি না মেনেও কেন রাজ্যে সাম্মানিক স্নাতক অর্থাৎ অনার্স গ্র্যাজুয়েট পাঠক্রমের মেয়াদ ৪ বছর করা হল, তা বুঝিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে নতুন নীতির ঘোষণা শিক্ষা দফতরের তরফে বুধবারই একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীও আরও একবার বিষয়টি জানালেন রাজ্যের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনার মঞ্চে।
স্নাতকের নতুন নীতি প্রসঙ্গে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্তে রাজ্য কোনও ভাবেই জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করছে না। রাজ্য যে পৃথক শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছিল, সেই অনুযায়ীই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মমতা বৃহস্পতিবার সেই কথা আরও ব্যাখ্যা করে বোঝালেন। মমতা বলেছেন, কেন এই পরিবর্তন জরুরি এবং কেন কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউজিসি প্রস্তাবিত এই নীতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ছাত্রছাত্রীরা যাতে অন্য রাজ্যগুলির থেকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ।
বৃহস্পতিবার কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছিল রাজ্যের ২০২৩ সালের বড় পরীক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা জানানোর অনুষ্ঠান। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও আইএসসি, আইসিএসইর মতো পরীক্ষার কৃতী ছাত্র-ছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে। জেলার ভিত্তিতে এক একটি টেবিলে বসানো হয়েছিল কৃতীদের। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি জেলার টেবিলে গিয়ে কৃতীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। তার পরেই মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সময় টেনে আনেন সাম্মানিক স্নাতক পাঠক্রমের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা দ্বাদশ পাশ করেছে, তাদের বলছি, সরকার সাম্মানিক স্নাতক পাঠ্যক্রমের নতুন নীতি নিয়েছে। আগে তিন বছর লাগত সাম্মানিক স্নাতক হতে। যারা এর পর পাস কোর্সে পড়বে, তাদের তিন বছরই লাগবে। কিন্তু যারা সাম্মানিক স্নাতক হতে চায়, তাদের পাঠক্রমের মেয়াদ বেড়ে চার বছর হচ্ছে।’’
এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা দফতর লিখেছিল, ‘‘২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে চার বছরের সাম্মানিক স্নাতক পাঠ্যক্রম চালু হয়ে যাবে।’’ শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সুবিধার কথা ভেবেই সাম্মানিক স্নাতক স্তরে চার বছরের পাঠক্রম চালু করছে রাজ্য।’’ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্র থেকে একটা নতুন নিয়ম করেছে ইউজিসি। তবে এর একটা সুবিধাও আছে। অনার্স গ্র্যাজুয়েটরা এর পর যখন মাস্টার ডিগ্রি বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা করবে, তখন আর দু’বছর পড়তে হবে না। বদলে এক বছরেই মাস্টার ডিগ্রি পাবে তারা। তার মানে দাঁড়াল সেই একই। স্নাতক হয়ে স্নাতকোত্তর হতে সেই পাঁচ বছরই সময় লাগছে।’’ মমতার কথায়, ‘‘এটা একটা সুবিধা।’’
মমতার ব্যাখ্যা, ‘‘যদি এটা অন্যান্য রাজ্য করে এবং আমরা না করি, তবে আমাদের পড়ুয়ারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে। তাই আমাদের এটা করতে হয়েছে।’’
জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে দেশের বেশ কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়েছে। রাজ্যের সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ও জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করেছে। বাকি রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ব্রাত্য আগেই জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কী ভাবে কার্যকর করা হতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি মত দেবে। সেই মতো কমিটি গঠন করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। ৬ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে। স্থির হয়, কমিটি রিপোর্ট দিলে তার ভিত্তিতে চার বছরের পাঠক্রম নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, কমিটি চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালুর পক্ষেই মত দেয়।