ডেঙ্গি মোকাবিলায় একগুচ্ছ নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সারা সপ্তাহ ২৪ ঘণ্টা কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেগুলি মেনে চললে ডেঙ্গিকে কাবু করা যাবে।
মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ডেঙ্গি নিয়ে নবান্নে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক হয় শনিবার। সেই বৈঠকে ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা-সহ স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা। এ ছাড়াও বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে কালীঘাটের বাড়ি থেকে ফোনের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য মুখ্যসচিব-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশ দেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
ওই বৈঠতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আগামী দু’সপ্তাহ পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্লকগুলিতে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে হেতু আগামী দু’তিন দিন বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, তাই যে সব এলাকায় জল জমবে, সেই জল দ্রুত সরানোর কথাও বলা হয়েছে। সমস্ত হাসপাতালে যাতে ঠিক মতো পরীক্ষা এবং চিকিৎসা হয়, সে দিকেও নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সবচেয়ে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি। ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলার বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলকে ডেঙ্গির ‘হটস্পট’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল, জেলায় জেলায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের জন্য এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়েছে। ডেঙ্গি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা এই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। অনলাইন মাধ্যমে বা ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
জেলার পাশাপাশি কলকাতাতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তৎপর হয়েছে পুরসভা। ফিরহাদ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এখন পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল হয়েছে। তবে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রচার চালাতে হবে। যত ক্ষণ না তাপমাত্রা কমছে, তত ক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে। যত ক্ষণ না মানুষ সচেতন হবেন, তত ক্ষণ ডেঙ্গিকে কাবু করতে পারব না।’’ গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরসভা। সেখানে জানানো হয়, রাত পর্যন্ত পুরসভার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলে রাখা হবে। সপ্তাহে তিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকবে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আর সপ্তাহে দু’দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে এগুলি। তবে রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত সরব বিরোধী দলগুলি। সপ্তাহখানেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। তার আগে স্বাস্থ্যভবনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার পরই বিধানসভায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন বিজেপি বিধায়কেরা।