রাজভবনের প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। খরচের জন্য যে এ কথা তিনি বলছেন, তা-ও জানান তিনি। — ফাইল ছবি।
রাজ্য ও রাজ্যপালের মধ্যে সম্পর্কের শুরুটা মধুর হলেও ক্রমেই তা তিক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার রাজভবনের প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। খরচের জন্য যে এ কথা তিনি বলছেন, তা-ও জানান তিনি। পাশাপাশি, রাজ্যপাল পদের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও শনিবার নিজের মত প্রকাশ করেছেন মমতা। তবে এ রাজ্যের কথা যে তিনি বলছেন না, সে উল্লেখও করেন তিনি। প্রসঙ্গত, রাজভবন এবং রাজ্যপাল পদের অপসারণের পক্ষেই দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বামেরা।
শনিবার মমতার কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা সলমন খান। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। কর্নাটকে বিজেপির হার নিয়ে মন্তব্য করার পরেই রাজ্যপাল পদ ও রাজভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এমনকি রাজ্যপালের ‘শাসন’ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যপালেরা কী ভাবে শাসন করছেন? রাজভবনের কী প্রয়োজন রয়েছে? আমি আমার রাজ্যপালের কথা বলছি না।’’ কেন তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, ‘‘সর্বত্র প্রচুর অর্থব্যয় হচ্ছে। বিল বাবদ।’’
এ রাজ্যের পূর্বতন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতার সংঘাত বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। টুইটারে তাঁকে ব্লক করে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন খোদ মমতাই। এর পর বোস রাজ্যপাল পদে শপথ নেওয়ার পর সেই সংঘাতের আবহে ইতি পড়েছিল। বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলার সময় রাজ্যপাল বোসের প্রশংসা করেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘নতুন রাজ্যপাল ভাল।’’ রাজ্যপালকে বাংলা শেখানোর জন্য সরস্বতী পুজোর দিন রাজভবনে ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। এর পর শিক্ষামন্ত্রী এবং রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দেন রাজ্যপালও।
কিন্তু ক্রমেই সংঘাত বাড়তে থাকে। শিক্ষা দফতরকে না জানিয়েই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আচমকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন আচার্য তথা রাজ্যপাল। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা না করেই বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে নতুন নিয়োগ করছিলেন রাজ্যপাল বোস। এই ‘অতি সক্রিয়তা’ ভাল চোখে দেখেননি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই আবহে রবীন্দ্রভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘যদি দেখি সংবিধান ভাঙা হচ্ছে বা আইন অমান্য করা হচ্ছে তবে আমিও শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের মতো কী করব বা কী করব না সেই দোটানায় বসে থাকব না।’’ মমতাকে এই পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘‘তিনি চুপচাপ বসে থাকবেন না তো কি? সবার চাকরি খাবেন? শুনুন আমি রাজ্যপালকে শ্রদ্ধা করি। আপনি প্রশ্ন করলেন বলে আমি উত্তর দিচ্ছি। রাজ্যপালকে আমরা সম্মান দিই কারণ, ওঁর পদটা হল আচার্যের, সম্মাননীয় পদ।’’
শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্বতন রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে সংঘাতের আবহে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসাবে মান্যতা দেওয়ার বিল এনেছিল রাজ্য। বিলটি বিধানসভায় পাশও করানো হয়েছিল। সেই বিল রাজ্যপালের কাছে এখনও রয়েছে। বোস রাজ্যপাল হওয়ার পর সেই প্রসঙ্গ আর তোলেনি রাজ্য সরকার। তবে বোসের সঙ্গে সংঘাতের আবহে ফের সেই বিল পাশ করানোর কথা বলেছিলেন ব্রাত্য। এ বার রাজ্যপাল পদ এবং রাজভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার এই মন্তব্যের পর সরব হয়েছে এ রাজ্যের বামেরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো বিরোধী থাকাকালীন রাজভবনকে নিজের দলীয় কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছেন বার বার। সেটা তাঁর অতীতের কর্মকাণ্ড দেখেই বোঝা যায়। রাজ্যপাল বা রাজভবন নিয়ে আমাদের অবস্থান আগাগোড়াই খুব স্পষ্ট। আমরা যে কথা এত দিন বলে এসেছি, এখন মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবির পক্ষে গলা মেলাচ্ছেন। নিশ্চয়ই কোনও চাপে পড়েছেন। সেই চাপে পড়েই হয়তো তিনি এখন এমন দাবি করছেন।’’