নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইউক্রেনে শুরু হওয়া পড়াশোনা বাংলার কলেজেই শেষ করতে পারবেন পড়ুয়ারা। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই ঘোষণার পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, কেন্দ্র এ ব্যাপারে তাঁকে কোনও সহযোগিতা করেনি। মমতা বলেন, ‘‘ওরা বলেছিল, পড়ুয়ারা পোল্যান্ড কিংবা হাঙ্গেরিতে যাক পড়াশোনা শেষ করতে। কেন্দ্র দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে রাজ্য তো দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তাই বাংলাতেই আমরা ওদের ভর্তির ব্যবস্থা করেছি।’’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কিছু দিন পরেই ইউক্রেন থেকে ৪২২ জন ফিরেছিলেন বাংলায়। এঁদের মধ্যে ৩ জন শ্রমিক এবং ৬ জন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রী ছাড়া বাকি ৪১৩ জনই ছিলেন ডাক্তারি পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা জানিয়েছেন, এঁদের প্রত্যেকের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ভেবেছে তাঁর সরকার। চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে শ্রমিকদের। ছাত্রদের পড়াশোনা শেষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এই পুরো কাজটাই একসঙ্গে বসে বৈঠক করে ঠিক করেছেন তাঁর সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা। তাঁরাই অধিকাংশ ডাক্তারি পড়ুয়াদের সরকারি কলেজে পড়াশোনা শেষ করার ব্যবস্থা করেছেন। প্রথম বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রদের অল্প খরচে বেসরকারি কলেজে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র এবং শ্রমিকদের জন্যও পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করেছেন।
নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা করার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, গত ১৬ মার্চ তিনি ইউক্রেন থেকে ফেরা ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবেন। ডাক্তারি পড়ুয়ারা যে হেতু সংখ্যায় বেশি, তাই তাঁদের জন্য ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের সাহায্যও চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু মমতা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল কাউন্সিল এ ব্যাপারে সাড়া তো দেয়ইনি বদলে পড়ুয়াদের তারা পোল্যান্ড বা হাঙ্গেরিতে গিয়ে বাকি থাকা শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পরামর্শ দেয়। বৈঠকে এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ওরা একবার খরচ করে ইউক্রেনে গিয়েছে, আবার খরচ করে পোল্যান্ড বা হাঙ্গেরিতে যাবে? ওই দেশগুলো তো ইউক্রেনের পাশেই। ওখানে যে ওরা পড়তে পারবে তার নিশ্চয়তা কোথায়!’’
ইউক্রেন থেকে বাংলায় ফেরা পড়ুয়াদের কোন কলেজে পড়াশোনা শেষ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তার বিশদও বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা ঘোষণা করেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের বেসরকারি কলেজে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডাক্তারির ষষ্ঠ বর্ষের ২৩ জন পড়ুয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নশিপ করতে পারবে। চতুর্থ এবং পঞ্চম বর্ষের ১৩৫ জন শিক্ষার্থী রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ‘অবজার্ভিং’ আসনে পড়ার সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়ারা সরকারি কলেজে প্র্যাকটিকাল ক্লাস করতে পারবে। তবে প্রথম বর্ষের নিট পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে কাউন্সিলিংয়ে বসতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়া দাঁতের চিকিৎসার তিন জন পড়ুয়াকে সরকারি কলেজে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পশু চিকিৎসার এক জন ছাত্র ছিলেন, তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারি সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ঘরে ফেরা তিন জন শ্রমিকের মধ্যে দু’জনকে নদিয়ার জেলাশাসকের দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ এবং ঋণ দেওয়া হয়েছে। এক জন শ্রমিক দুবাইয়ে গিয়েছেন কাজের সন্ধানে।