ফাইল চিত্র।
করোনা-যুদ্ধে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার কথা গোড়া থেকেই জানিয়ে রেখেছিল বিরোধীরা। পারস্পরিক সহযোগিতার সেই আবহেই বিমান বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট নেতৃত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে সব বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন বাম নেতারা, বৈঠকের অব্যবহিত পরে তার ভিত্তিতেই প্রকাশ্যে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মনোভাবে বিমানবাবুরা খুশি, মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের সহযোগিতা নিয়েই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই চালাতে আগ্রহী।
লকডাউনের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মানুষের যে সব সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। বিমানবাবুর চিঠি পেয়ে তাঁদের সময় দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে মঙ্গলবার বিমানবাবুর নেতৃত্বে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়-সহ ৯ জনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। ওঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। ওঁরা সহযোগিতা করবেন বলেছেন। আমরাও সহযোগিতা চেয়েছি।’’
আলোচনায় তাঁরা কি খুশি? বিমানবাবু বলেন, ‘‘সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কিছু প্রস্তাব নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমাদের যে ভাবে বলা উচিত, তা-ই বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারের যে ভাবে কথা বলা উচিত, সে ভাবেই কথা বলেছেন। রণং দেহি মনোভাব নিয়ে ওখানে পৌঁছইনি। শোকাহত হয়ে বেরিয়েও আসিনি!’’
নবান্নে ঢোকার মুখে বাম নেতা বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্রের থার্মাল স্ক্রিনিং। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
বাম নেতাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সীমিত সাধ্যের মধ্যে সরকারের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, সবই করার চেষ্টা হচ্ছে। সর্বস্তরে রেশন পৌঁছনো, চটকল ও চা-শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে মালিকদের বার্তা দেওয়া, বাড়িতে বসে বিড়ি শ্রমিকদের বিড়ি বাঁধা এবং টালি তৈরির ইটভাটায় চুল্লি জ্বালানোর অনুমতি-সহ বেশ কিছু প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন বাম নেতারা। জবাব মিলেছে ইতিবাচক। করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরির প্রসঙ্গও তাঁরা তুলেছিলেন। সঙ্কটের সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা যে কাঙ্ক্ষিত নয়, সেই প্রশ্নে একমতও হন মুখ্যমন্ত্রী ও বাম নেতারা।
বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী কোনও দলের নাম না করেই বার্তা দিয়েছেন, রেশনের সামগ্রী নিয়ে কেউ যেন বিলি করতে না যায়। তাঁর কথায়, ‘‘রেশন দোকানে গিয়ে কেউ চাল চাইবেন না, সেবা করতে হলে নিজের পকেট থেকে করুন! রেশন দোকানগুলোকেও বলব, জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। খারাপ চাল দেবেন না। চাল পাওয়া মানুষের অধিকার, ডালও তাঁরা পাবেন।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার এ দিনই অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী লকডাউনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না! কিছু মানুষ এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও লকডাউন ভেঙে ত্রাণ দিচ্ছেন বা ভিড় শাসন করছেন। লকডাউন ভেঙে জমায়েত না করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীও ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করেছেন। তবে একই সঙ্গে বিজেপির প্রতি ইঙ্গিত করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেউ কেউ রাজনীতি করতে নেমে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ভুয়ো খবর, পরস্পর-বিরোধী মন্তব্য, দোযারোপ বা ঘোলা জলে মাছ ধরার সময় এটা নয়। একটা নতুন অসুখ এসেছে। এখন সেটার মোকাবিলা করি।’’