প্রশাসক: কার্শিয়াঙের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
দার্জিলিং শহর এবং মিরিকের পরিকাঠামোর কাজ নিয়ে পুরসভা, প্রশাসন, জিটিএ-কে কার্যত তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে কার্শিয়াং কমিউনিটি হলে পাহাড়ের দুই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে দুই পাহাড়ি শহর নিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একবার তো বলেই ফেলেন, ‘‘নাটক হচ্ছে? কাজের কাজটা করুন।’’
ক্ষুব্ধ মমতা
• ভোটে হার প্রসঙ্গে: বাইরের লোক এসে টাকা ছড়িয়ে জিতে গেল!
• হিল ইউনিভার্সিটি প্রসঙ্গে: সরকারের টাকা সস্তা? ৩৩০ কোটি? ৫০ কোটির মধ্যে কাজ করুন
• দার্জিলিং প্রসঙ্গে: রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ ঠিক নেই। কেউ কিছু দেখেনি, দেখছে না।
• মিরিক প্রসঙ্গে: এটা কী নাটক হচ্ছে! একবার এই দফতর আর একবার ওই দফতর। বন্ধ করুন এ সব।
• পুজোর ব্যবসা প্রসঙ্গে: ব্যবসা ভাল হবে কী করে? ভয়ের মধ্যে কি কাজ হয়? স্থায়িত্ব দরকার।
• উন্নয়ন বোর্ড প্রসঙ্গে:
উন্নয়ন বোর্ডগুলি কী করেছে? তার সমীক্ষা হবে, অডিট হবে। তার পরে বাকি সিদ্ধান্ত।
• অনীত থাপা, ডিএম-দের উদ্দেশে: ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হবে। বসে থাকলে চলবে না।
দার্জিলিং পুরসভায় বর্তমানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জিটিএ-র সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চালাচ্ছে পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি হাঁটতে বার হয়ে কিছু জিনিস দেখেছি। রাস্তা একেবারে খারাপ। দূষণ, নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে। কত দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। দার্জিলিং সম্পর্কে তাদের কী ধারণা হবে?’’ একটি বেসরকারি সংস্থা রাস্তা খুঁড়েছে, দাবি করা হয় বৈঠকে। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে অফিসারদের ওই সংস্থার কাছ থেকে টাকা আদায় করার নির্দেশ দেন। তার পরেই আবার বলেন, ‘‘আমি ওই সংস্থাকে ধরেছিলাম। ওরা বলছে টাকা দিয়েছে। কে যেন টাকা নিয়ে নিয়েছে। কী হচ্ছে এ সব!’’
দার্জিলিং শহরের জন্য চার দফা দাওয়াই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রাস্তা সারাই, নিকাশি, আবর্জনা ও বিদ্যুতের কাজ আপৎকালীন ভিত্তিতে করতে হবে। তিন বার দিনে রাস্তা পরিষ্কার করার দাওয়াই দেন তিনি। একই সঙ্গে নিদান দেন, যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে যেন জরিমানা করা হয়। দার্জিলিং ম্যাল চৌরাস্তা, বাজার, লালকুঠি, নেহরু রোড, চিড়িয়াখানা, টাইগার হিল এবং ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি এলাকায় কাজ হবে বলেও জানান তিনি।
দার্জিলিং নিয়ে বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লালকুঠির সামনে চেয়ারে শ্যাওলা পড়ে গিয়েছে। রং করতে বলেছিলাম। কেউ দেখছে না। আগেও বারবার বলে গিয়েছি। বিনয়, অনীত, তোমাদের তো এ সব দেখার কথা! আমি বাইরের লোক হয়ে যদি এ সব দেখতে পারি, তোমরা এখনকার লোক হয়ে কেন দেখ না?’’ তার পরে বলেন, ‘‘আমার একদম ভাল লাগছে না। আর্বজনা নিয়ে মাইকে প্রচার করুন। আমি যা বলে দিয়ে গেলাম, আগামী বার এসে দেখব।’’
এর পরে মিরিকের সুইস কটেজের কাজ, লেকের কাজ নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কথাও বলেন। মিরিক পুরসভা এবং চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাইকে কাজে সামিল করার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উনি খুব কাজের লোক।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান অমর সিংহ রাইকে গোটা পাহাড়ের কাজ নজরদারি করতে বলেন। একই নির্দেশ দেন, কালিম্পঙের পুর-চেয়ারম্যানকেও।
এক দফায় তো সুইস কটেজের কাজ চলছে শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। জিটিএর প্রধান সচিবকে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে শুনছি, কাজ হচ্ছে। আর জানতে চাইলেই এ ওর ঘরে দায়িত্ব পাঠাচ্ছে।’’ তার পরে বলেন, ‘‘আমি কিছু শুনতে চাই না। তিন মাসে টার্গেট ধরে কাজ শেষ করতে হবে। আমি যখন দিঘা-তমলুক করেছিলাম, সবাই বলেছিল ন’বছর লাগবে। আমরা ন’মাসে করেছি। কাজ এ ভাবে করতে হবে।’’