Mamata Banerjee

কড়া চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, পত্র-যুদ্ধে রাজ্যপালও

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই রাজ্য সরকারের নানাবিধ সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্যপাল ধনখড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৩৬
Share:

কড়া ভাষায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যে আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছিল, তাতেই এ বার বিস্ফোরণ হল!

Advertisement

সাংবিধানিক রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে রাজ্যপাল ক্রমাগত তাঁকে ও তাঁর সরকারকে আক্রমণ করছেন এবং প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার পাঁচ পাতার কড়া চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও পাঁচ পাতার জবাবি চিঠি দিয়ে পাল্টা অভিযোগ করলেন, সাংবিধানিক কর্ত্যবের ধারাবাহিক অবহেলা করছেন মুখ্যমন্ত্রীই। সংবিধান রক্ষার শপথকে মান্যতা দেওয়া এবং বাংলার মানুষের স্বার্থে তিনি শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ করে যাবেন বলেও দাবি করেছেন ধনখড়।

বিস্ফোরণের সূত্রপাত বুধবার মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো রাজ্যপালের মেসেজ ঘিরে। যা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে সকাল ৭টায়। করোনা ও রেশন সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে জানান, করোনা মোকাবিলায় গোটা প্রশাসনই এখন ব্যস্ত। সেই চিঠিতে ‘স্তম্ভিত ও অপমানিত’ রাজ্যপাল যে মেসেজ মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠান, তার ভাষা ও ভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ দিন পাঁচ পাতার চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যেখানে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘রাজ্যপাল হয়ে সংবিধানের ধর্ম মানছেন না আপনি। এমনকি, দু’জন সাংবিধানিক পদাধিকারীর মধ্যে আদানপ্রদানে যে শিষ্টতা থাকা দরকার, তার সীমাও লঙ্ঘন করছেন’।

Advertisement

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই রাজ্য সরকারের নানাবিধ সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্যপাল ধনখড়। জাতীয় বিপর্যয়ের সময়ে রাজ্যপালের এমন ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে সবের জেরে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে রাজ্যপালকে এমন কড়া প্রতিবাদ-পত্র সাম্প্রতিক অতীতে বেনজির।

আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে রটনার জেরে একঘরে স্বাস্থ্যকর্মী

মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে রাজ্যপাল ধনখড় এ দিন সন্ধ্যায় টুইটে মন্তব্য করেন, ‘‘যা বলা হয়েছে, তা তথ্যগত ভাবে খুবই ভুল এবং সাংবিধানিক ভাবে দুর্বল। আমি আরও কিছু কথা বলব। প্রকৃত চিত্র রাজ্যের মানুষের জানা উচিত।’’ রাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠির জবাব পাঠিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তিনি সহায়তা করতেই চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বার্তাকে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে উপেক্ষা করেছেন, তাতে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন। রাজ্যপালের পাল্টা অভিযোগ, রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারাই বরং সাংবিধানিক রীতি অগ্রাহ্য করে তাঁকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষের স্বার্থের জন্য আমি পুরোপুরি নত হতে রাজি। মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারকে অনুরোধ করব, দেওয়ালের লিখন পড়ুন, সংবিধান মেনে চলুন। আমার এই মনোভাবকে দুর্বলতা মনে করবেন না’।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ঘোষিত রেশনের খাদ্যশস্য সকলের কাছে না পৌঁছনো এবং রাজ্য সফরে আসা কেন্দ্রীয় দলকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল। মাইক বা ঝাঁটা ছেড়ে সংবিধানে মন দিন মুখ্যমন্ত্রী, এমন মন্তব্যও তিনি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তাঁর চিঠিতে বলেছেন, ‘‘ভুলে যাবেন না, আপনি মনোনীত রাজ্যপাল। আমি একটি রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।’’ রাজ্যপাল যে রাজ্যের প্রধান, সেই রাজ্যেরই মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করছেন, যে ভাষা ও ভঙ্গিতে সমালোচনা করছেন, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারি আধিকারিকদের অসম্মান করছেন এবং রাজ্য প্রশাসনের কাজে বারবার হস্তক্ষেপ করছেন— এর কোনওটাই সাংবিধানিক আচার ও শিষ্টতার মধ্যে পড়ে না বলে চিঠিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন মমতা।

আরও পড়ুন: নয়া সংক্রমণ বেশি কলকাতাতেই: মুখ্যসচিব

ধনখড় আবার রাতে তাঁর জবাবে বলেছেন, রাজ্যপালকে বারবার ‘মনোনীত’ বলে কটাক্ষ করা সংবিধানের প্রতি অশ্রদ্ধারই পরিচায়ক। সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের দায়িত্ব ও এক্তিয়ারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ধনখড়।

দু’জনের পুরনো দু’টি চিঠি ও মেসেজের বয়ান পাশাপাশি রেখে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, সুদূরপ্রসারী কল্পনাতেও তাঁর আগের চিঠি কি কাউকে আঘাত বা অসম্মান করতে পারে?বরং, রাজ্যপাল যে ভঙ্গি ও ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আদানপ্রদান করছেন, সংযত ভাষায় বললে সেটাই ‘অসংসদীয়’। রাজ্যপালকে নির্বাচন না করে মনোনয়নের ব্যবস্থা সম্পর্কে সংবিধান প্রণেতা বি আর অম্বেডকর কী বলেছিলেন, সারকারিয়া কমিশনে রাজ্যপাল নিয়োগ ও তাঁর পদের সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে কী বলা হয়েছিল, সে সবও এ দিনের চিঠিতে উল্লেখ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, চিঠি চালাচালির বিবরণ পত্র প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হচ্ছেন, যাতে দেশ ও রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারেন, সাংবিধানিক গণ্ডি প্রকৃতপক্ষে কে ভাঙছেন! মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি ছিল পাঁচ পাতার, সঙ্গে দু’পাতা সংযোজন। রাজ্যপালেরও তা-ই! তবে তিনি জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার আরও তথ্য প্রকাশ্যে এনে মানুষকে সব জানতে দেবেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement