বুধবার ছ’দিনের সফরে কলকাতায় আসছেন ভাগবত। — ফাইল চিত্র।
বুধবার কলকাতায় আসছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। পর দিন, বৃহস্পতিবারই তিনি একান্তে দেখা করবেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কয়েক জন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির সঙ্গে। সেই তালিকায় রয়েছেন বাংলার দুই নামী ধ্রুপদী শিল্পী রাশিদ খান এবং তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। দু’জনেই আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা মঙ্গলবার স্বীকার করেছেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে। দু’জনেই জানিয়েছেন, বৈঠকে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের। তবে ‘যাবেনই’ বলে জানাননি কেউ।
ছ’দিনের সফরে বুধবার রাতে কলকাতায় এসে আগামী সোমবার পর্যন্ত থাকবেন ভাগবত। বৃহস্পতিবারই তিনি বিশিষ্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। শেষ দিন শহিদ মিনারে হবে সঙ্ঘের প্রকাশ্য কর্মসূচি। বাকি তিন দিন সাংগঠনিক বৈঠক। আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, শহিদ মিনার ছাড়া বাকি কর্মসূচির সবটাই রুদ্ধদ্বার।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জল্পনা বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি নিয়ে। সঙ্ঘের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছে, পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করবেন ভাগবত। গোটাটাই হবে রুদ্ধদ্বার। সেই কর্মসূচি কোথায় হবে বা কারা আসবেন সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই বলা হয়নি। সঙ্ঘের পূর্বক্ষেত্রের সঙ্ঘচালক অজয়কুমার নন্দী বলেন, ‘‘আমরা অনেককে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাঁরা কে কে আসবেন, সেটা বুধবারের আগে জানা যাবে না। আশা করা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ জন উপস্থিত থাকবেন।’’
সঙ্ঘের তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েক বছরে পূর্ব ভারত (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড,) এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা করেছেন ভাগবত। সঙ্ঘ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ বার তাঁদেরই একসঙ্গে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, সব বৈঠক কলকাতার সদর দফতর কেশব ভবনে হলেও ওই কর্মসূচিটি অন্য কোথাও হবে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতায় এসে ভাগবত গিয়েছিলেন গড়িয়ার কাছে রাশিদ খানের বাড়িতে। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল। সঙ্ঘকর্তারা এবং রাশিদ জানিয়েছিলেন সেই সাক্ষাৎ ছিল ‘সৌজন্যমূলক’। বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন রাশিদ। মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই দিনই দিল্লি থেকে ফিরব। কিন্তু বিমান যে ভাবে রোজ দেরিতে চলাচল করছে, তাতে সময়ে পৌঁছতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।’’ শিল্পী তেজেন্দ্রনারায়ণের বাড়িতে ভাগবত গিয়েছিলেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ঘণ্টা দেড়েক ছিলেন সেখানে। শিল্পীর পাশাপাশি তাঁর পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিভিন্ন ঘরানা ও রাগ-রাগিণী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এ বার আমন্ত্রণ পেলেও কিছুটা চিন্তায় তেজেন্দ্রনারায়ণ। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই দিন আমার একটা রেকর্ডিং রয়েছে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব কি না সেটা এখনই বলতে পারছি না।’’
‘সম্পর্ক অভিযান’-এর অঙ্গ হিসাবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুম্বইতে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বাড়িতেও গিয়েছিলেন ভাগবত। এর পরে পরেই মিঠুনকে বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা যায়। যদিও সঙ্ঘ দাবি করেছিল, ভাগবতের সাক্ষাতের সঙ্গে মিঠুনের বিজেপিতে যোগের কোনও সম্পর্ক নেই। ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপির কোর কমিটিতে জায়গা পাওয়া মিঠুন বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ডাক পেয়েছেন কি না জানা যায়নি। একই ভাবে অতীতে ভাগবতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন কি না জানা যায়নি। হিসাব মতো তাঁরও আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভাগবত-নপরাজিত সাক্ষাৎ হয়েছিল কেশব ভবনে। মঙ্গলবার তাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে ফোন করে আমন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নপরাজিত বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কিছু বলব না।’’