বাম জমানার অবসানের পরে রাজ্যে সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ১২ লক্ষ থেকে নেমে গিয়েছে ৭ লক্ষে। ধরে ধরে সদস্য করার লড়াই আবার শুরু হয়েছে নতুন করে। রাজ্যের প্রায় সব কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল দখল নেওয়ার পরে এখন অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে পাশে নেওয়া হবে নাকি একলাই চলা হবে— সিপিএমের পার্টি লাইনের এই দ্বন্দ্ব এ বার ছায়া ফেলছে তাদের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনেও।
এক দিকে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র বাঁচানো এবং অন্য দিকে সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে লড়াই— এই দুই ক্ষেত্রেই কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক সব দলের ছাত্র সংগঠনকে একজোট করে যুদ্ধ চালানোর পক্ষপাতী ছিলেন এসএফআইয়ের বর্তমান ছাত্র নেতৃত্ব। এক কথায়, তাঁরা জোটপন্থী। সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে তাঁরা গৌতম দেব শিবিরের সৈনিক বলেই পরিচিত। এখনও পর্যন্ত ছাত্র সম্মেলনের প্রস্তুতি যত দূর এগিয়েছে, তাতে এসএফআইয়ের রাজ্য নেতৃত্বে রদবদলের সম্ভাবনা প্রবল। কলকাতা জেলার সৌম্যজিৎ রজক এবং পূর্ব বর্ধমানের দীপঙ্কর দে-র নাম রাজ্য নেতৃত্বের দুই শীর্ষ পদের জন্য বিবেচনায় সব চেয়ে এগিয়ে। তাঁরা যে জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন, সিপিএমের অন্দরে তারা কেউ জোটপন্থী বলে খ্যাত নয়!
সিপিএম সূত্রের খবর, ছাত্র রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে লড়াইয়ের পক্ষেই এসএফআইয়ের অন্দরে মত ভারী। কিন্তু সংগঠনে নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ঋতব্রত-কাণ্ডও ছায়া ফেলছে বলে দলের একটি সূত্রের বক্তব্য। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে যাওয়া ঋতব্রত গণতান্ত্রিক ঐক্যেরই পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর সেই মতের প্রভাব এখনকার সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বে আর কোনও ভাবে থাকুক, তা চাইছে না রাজ্য সিপিএমের বড় অংশই। তাই সংগঠনের মধ্যে জনপ্রিয়তা যেমনই হোক, বর্ধমান ও কলকাতার দুই ছাত্র নেতাকে সামনে এনে এক ঢিলে সব পাখি মারার চেষ্টা চলছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘যা হওয়ার, ছাত্র সম্মেলনেই হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হবে।’’
পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরে আগামী ১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর এসএফআইয়ের ৩৬তম রাজ্য সম্মেলন বসছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ছাত্র সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে এ বার প্রধান বক্তা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। যিনি নিজে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে দলকে গণতান্ত্রিক ঐক্যের লাইনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রবল ল়ড়াই করছেন! ঘটনাচক্রে, আলিমুদ্দিনও সেই লড়াইয়ে ইয়েচুরির পাশে। তার পরেও ছাত্র সংগঠনে কোন লাইনের জয় হয়, বাম রাজনীতিতে নজর সে দিকেই!