নমিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শান্তিপুর পুরসভার পুরপ্রধান সুব্রত ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
বাবার মৃত্যুর পর থেকে হাতে আসেনি তাঁর পেনশনের টাকা। ফলে অভাবের সংসারে খুদকুঁড়ো খেয়ে দিন কাটছিল তিন ভাইবোনের। এমনকি, সম্প্রতি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন তাঁরা। বুধবার, ২০ জুলাই সে খবর জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তা প্রকাশিত হওয়ার পর রবিবার নদিয়ার শান্তিপুরের ওই পরিবারের পাশে পৌঁছল স্থানীয় প্রশাসন। আশ্বাস দিল, অবিলম্বেই করোনার টিকা, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-সহ রাজ্য সরকারের নানা পরিষেবার সুবিধা পাবেন ওই তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
নদিয়ার শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত অধ্যাপক পরমানন্দ মুখোপাধ্যায়ের তিন ছেলেমেয়ের দিন কাটছিল কার্যত অর্ধাহারে। পরমানন্দের মেয়ে ৭২ বছরের নমিতা। তাঁর দুই ভাই দেবাশিস এবং বিশ্বজিৎ, যথাক্রমে বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে স্নাতক। এক জনের বয়স ৭০, অন্য জনের ৬৫। বয়সের ভারে রোজগারের সামর্থ্য হারিয়েছেন তাঁরা। ফলে তিন জনের কাছে বাবার পেনশনই ছিল ভরসা। কিন্তু, নানা আইনি জটিলতায় সে পেনশনও জোটেনি তাঁদের। নমিতার সঙ্গে তাঁর এক ভাই বার্ধক্যভাতা পেলেও তা বেরিয়ে যায় চিকিৎসা এবং সংসারের নানা খরচে। ফলে একবেলা খুদকুঁড়ো খেয়েই দিন কাটে তিন ভাইবোনের। অভিযোগ, শান্তিপুর পুরসভা, রানাঘাট মহকুমাশাসকের অফিস থেকে বিকাশ ভবন— হন্যে হয়ে ঘুরলেও বাবার পেনশন হাতে আসেনি।
আনন্দবাজার অনলাইনে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে রবিবার নমিতাদের বাড়িতে পৌঁছন পুর প্রতিনিধিদল। শান্তিপুর পুরসভার পুরপ্রধান সুব্রত ঘোষ, সহকারি পুরপ্রধান কৌশিক প্রামাণিক, স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর সাহা, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রশান্ত গোস্বামী এবং শান্তিপুর পুরসভার বিভিন্ন প্রতিনিধি নমিতাদের বাড়িতে পৌঁছে ভাইবোনেদের আশ্বাস দিয়েছেন। করোনার টিকাদান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-সহ নানা সরকারি পরিষেবার লাভ অবিলম্বে পাবেন তাঁরা। এ ছাড়া, পেনশনের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজখবর নেবেন বলেও আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন পুরপ্রধান।
রবিবার ওই পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয় পুর প্রতিনিধিদল। তাদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরাও। রানাঘাট, ফুলিয়া এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেও পরিবার সূত্রে খবর। অধ্যাপকের ছেলে ৬৫ বছরের বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় পরিবারের পক্ষ থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে এই ঘটনাকে প্রবহমান করে জনসমক্ষে তুলে এনেছে, তাতে এই সংবাদমাধ্যমকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’’
শান্তিপুর পুরসভার প্রধান জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি রানাঘাট মহকুমাশাসককে খতিয়ে দেখতে বলেছেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে ওঁরা খুবই অসুস্থ। আমরা চেষ্টা করব পুরসভার তরফে সাহায্য করার। ওঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আবেদনপত্র যথাস্থানে পৌঁছে দেব। ডাক্তারেরা যাতে বাড়িতে এসে ওঁদের ভ্যাকসিন দিয়ে যান, সে ব্যবস্থাও করব। দু’জন (বার্ধক্য) ভাতা পান। অন্য জনের পেনশনের জন্য সমস্ত ডকুমেন্ট জমা দিতে বলেছি। সে জন্য আমি নিজে এসডিও-র কাছে সরকারি ভাবে চিঠি লিখব।’’