মণিকা মাহাতোর খুনের প্রতিবাদে মিছিল কলকাতায়। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ভৌগোলিক ও স্থানিক অবস্থানের বিচারে পুরুলিয়া থেকে কলকাতা তেমন দূরে নয়। কিন্তু পড়তে বেরিয়ে পুরুলিয়ার সপ্তদশী ছাত্রী মণিকা মাহাতোর নির্মম ভাবে খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে কলকাতার ‘উদাসীনতা’য় তার শোকে কাতর পুরুলিয়াবাসীদের মনে হচ্ছে, কলকাতা বুঝি অ-নে-ক দূরে!
মণিকা-হত্যার বিরুদ্ধে সেই কলকাতাকে জাগিয়ে তুলতে পুরুলিয়া থেকে হেঁটে রবিবার মহানগরে পৌঁছন দিব্যজ্যোতি সিংহদেও, রানাপ্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আকাশ সিকদার নামে তিন যুবক। এসে তাঁরা দেখলেন, মণিকা খুনের তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে সরব হয়েছে কলকাতাও।
ওই ছাত্রী-হত্যার উপযুক্ত তদন্ত চেয়ে রাস্তায় নেমেছে পুরুলিয়ার বিভিন্ন সংগঠন। নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেই প্রতিবাদই আছড়ে পড়েছে কলকাতায়। পুরুলিয়ার প্রতিবাদীরা এসেছেন। কলকাতার বেশ কিছু মানুষ এবং একটি সংগঠনও রবীন্দ্র সদন, অ্যাকাডেমি ও ফাইন আর্টসের সামনে মণিকার খুনিদের শাস্তি চেয়ে জমায়েত করলেন, মোমবাতি মিছিল করলেন। তাঁদের অভিযোগ, শুধু খুনই হয়নি মণিকা। খুনের আগে তার উপরে শারীরিক নির্যাতনও চালানো হয়েছে। তাঁদের দাবি, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত অরুণ মাহাতো ও অরিজিৎ মাহাতো নামে দু’জনকে গ্রেফতার করলেই হবে না। অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে অন্য তিন অভিযুক্তকেও।
মণিকা-স্মরণে কলকাতার জমায়েতে দেখা মিলল পুরুলিয়া থেকে হেঁটে আসা দিব্যজ্যোতি, রানাপ্রতাপ, আকাশের। তাঁদের হাতে পোস্টার। ওই তিন যুবকের অভিযোগ, একটি মেধাবী মেয়েকে দুষ্কৃতীরা এ ভাবে নির্যাতন করে খুন করে পালাল। পুলিশ মাত্র দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তিন জনকে আটক করেছিল। কিন্তু পরে তাদের ছেড়ে দেয়। কেন? তদন্ত ঠিকমতো হচ্ছে না। যে-গাড়িতে করে ওই ছাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়, এখনও হদিস নেই সেটিরও। কেন?
মণিকা-হত্যার প্রতিবাদে ‘জঙ্গল মহল’ নামে কলকাতার একটি সংগঠন পথে নেমেছে। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ব্রত বেরা বলেন, ‘‘কলকাতার এ-রকম কোনও ঘৃণ্য ঘটনা ঘটলে বিশিষ্টজনেরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। বিচার চেয়ে মিছিল হয় শহরের রাজপথে। মণিকা পুরুলিয়ার গ্রামের গরিব মেয়ে বলে কি কারও নজরে আসছে না? আমরা পথে নেমে প্রতিবাদ করছি। বিচার চাইছি।’’ আন্দোলনে পথে নামা মণিকার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ও খুব মেধাবী মেয়ে ছিল। পড়াশোনায় মন ছিল খুব। ওর এ-রকম পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’
মণিকা মাধ্যমিক পাশ পরে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের এএন ঝা হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিল। জেঠুর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। ৩ মে জেঠুর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল সে। কথা ছিল, টিউশন সেরে বোরোর বড় মামরো গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে। কিন্তু সে আর বাড়ি ফেরেনি। সপ্তাহ পার করে বান্দোয়ান থেকে বেশ খানিকটা দূরে টিলার উপরে পাওয়া যায় তার পচাগলা দেহ। মণিকার বাবা সমীরকুমার মাহাতো জানান, ৩ মে বিকেলেই তাঁরা থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তার পরেও থানায় গিয়েছেন বারবার। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে।
ছাত্রীটির পরিবারের অভিযোগ, রীতিমতো ছক কষে অপহরণ করা হয়েছিল মণিকাকে। তার পরে তার উপরে নির্যাতন চালিয়ে খুন করে দেহ ফেলে দেওয়া হয় টিলার উপরে। জেলা পুলিশ অবশ্য জানায়, ময়না-তদন্তে মণিকাকে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তবে ভিসেরা রাখা আছে। সিআইডি চাইলে তদন্ত করতে পারে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।