গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
ঝাড়খণ্ডের বিধায়করা নগদ-সহ ধরা পড়লেন পশ্চিমবঙ্গে। সেই ঘটনায় নাম জড়াল অসমের মুখ্যমন্ত্রীর! হাওড়ায় শনিবার সন্ধ্যায় তিন কংগ্রেস বিধায়ককে বিপুল নগদ-সহ গ্রেফতারির ঘটনা ক্রমশই আরও রহস্যজনক হয়ে উঠছে। কোথা থেকে এল এত টাকা, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, কার নির্দেশে— তা তদন্ত করে বার করবে সিআইডি।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন কংগ্রেস বিধায়ক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় মহারাষ্ট্রের ছায়া দেখছে কংগ্রেস। ধৃত বিধায়কদের সাসপেন্ড করার পর কংগ্রেসের দাবি, ঝাড়খণ্ডেও বিধায়কদের টাকা দিয়ে সরকার ফেলার ছক কষছে বিজেপি। এ দিকে ধৃত তিন কংগ্রেস বিধায়ক সহ পাঁচ জনকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এই প্রেক্ষিতেই প্রকাশ্যে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঝাড়খণ্ডেরই আর এক কংগ্রেস বিধায়ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগপত্রে তিনি দাবি করেছেন, হাওড়া পুলিশের হাতে ধৃত তিন কংগ্রেস বিধায়ক তাঁকে কলকাতায় আসতে বলেছিলেন। সেখানে তাঁকে নিয়ে গুয়াহাটিতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। উদ্দেশ্য, ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকার ফেলে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা।
ঘটনায় বিজেপিকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। মুখপাত্র তথা তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই গোটা খেলার পিছনে বিজেপির ভূমিকা কী? এত টাকা বিধায়কদের কাছে এল কোথা থেকে? তৃণমূল ঘটনার তদন্তের দাবি করছে। পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। তিনিই বলেছিলেন বিজেপির পরবর্তী লক্ষ্য ঝাড়খণ্ড।’’
ঝাড়খণ্ডের বারমোর কংগ্রেস বিধায়ক কুমার জয়মঙ্গল সিংহ রবিবারই রাঁচীর আরগোরা থানায় হিমন্তের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি দায়ের করেছেন। একই ভাবে পাঁচলায় ধৃত কংগ্রেস বিধায়কদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরাও অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ঝাড়খণ্ডেও মহারাষ্ট্র-মডেল আমদানি করার মরিয়া চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘অপারেশন লোটাস’ (বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচিত সরকার ভেঙে বিজেপি সরকার তৈরি করার ঘটনাকে এই নামে অভিহিত করেন বিরোধীরা)। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়ক প্রতি ১০ কোটি টাকা দর হাঁকছে বিজেপি। দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রিত্বের টোপও।’’ নেপথ্যে থেকে গোটা ঘটনাটি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ কংগ্রেসের।
যদিও কংগ্রেসের তোলা অভিযোগ মানতে চাননি হিমন্ত। ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘‘জানি না কেন আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হল। ২২ বছর কংগ্রেস দলটা করেছি। তাই অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ থাকা স্বাভাবিক।’’
অভিযোগপত্রে জয়মঙ্গল দাবি করেছেন, তাঁকে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যে বিজেপি সরকার তৈরি হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গোটা বিষয়টিই বিজেপির দিল্লির নেতৃত্বের সতর্ক নজরে হচ্ছে বলেও তাঁকে জানানো হয়। জয়মঙ্গল লিখেছেন, ‘জামতাড়ার বিধায়ক ইরফান আনসারি আমায় জানান, বিজেপির বড় নেতারা দিল্লিতে বসে প্রতিনিয়ত হিমন্তের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের আশীর্বাদ রয়েছে হিমন্তের সঙ্গে।’
শনিবার রাতে হাওড়ার পাঁচলায় জাতীয় সড়কের উপর গাড়ি তল্লাশিতে ধরা পড়েন ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ক। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা।