বিপন্ন শৈশব ফাইল চিত্র
ওরা ফের কাজ করে। স্কুলে না গিয়ে পেটের দায়ে ঢুকেছিল কাজে। সেই নাবালকদের স্কুলমুখী করতে শুরু হয়েছিল শিশু শ্রমিকদের স্কুল (চাইল্ড লেবার স্কুল)। ভাতার ব্যবস্থা থাকায় অনেকে স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছিল। কিন্তু ২০১৯-এর ডিসেম্বর থেকে পুরুলিয়া জেলায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৮৯টি চাইল্ড লেবার স্কুল। পড়ুয়াদের অনেকেই ফিরেছে পুরনো কাজে।
পুরুলিয়ার ঝালদা, জয়পুর, আড়শা, বাঘমুণ্ডি ও পাড়া ব্লকের শিশু শ্রমিকেরা অনেকেই বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করেছে। চাইল্ড লেবার স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের পড়ুয়াদের একাংশ আগের মতো ইটভাটা বা চায়ের দোকানেও ঢুকে পড়েছে। যদিও তা মানতে নারাজ জেলার শ্রম দফতর। পুরুলিয়ার সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ অঙ্কন চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘শিশু শ্রমিকদের উপরে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। স্কুল বন্ধ হওয়ায় শিশু শ্রমিকদের স্কুলের পড়ুয়ারা পুরনো কাজে ফিরেছে বলে কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই।’’
যদিও ‘বাস্তব’ অন্য রকম বলে দাবি করছেন জেলার বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ভীম কুমার। এই জেলায় বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ঝালদা, জয়পুর, আড়শা, বাঘমুণ্ডি ও পাড়া ব্লকে। ভীমবাবুর দাবি, ‘‘গত দু’বছরে ওই সব ব্লকে বিড়ি বাঁধার কাজে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে।’’ ঝালদা শহরের বাঁধাঘাটের বাসিন্দা বছর তেরোর এক কিশোর বলে, ‘‘শিশু শ্রমিকদের স্কুল বন্ধ হওয়ার পরে, বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করেছি।”
অন্য কাজেও যুক্ত হয়েছে অনেকে। ঝালদারই এক বাসিন্দা জানান, শিশু শ্রমিক স্কুলের পড়ুয়া তাঁর ১৩ বছরের ছেলে এখন রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগাড়ের কাজ করছে। মাথায় করে ইট, বালি, সিমেন্টের বস্তা বইছে। বাঘমুণ্ডির ভুরসু গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার বারো বছরের ছেলে এখন তার বন্ধুদের সঙ্গে ফের ইটভাটায় কাজ শুরু করছে।’’ এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘স্কুল বন্ধ। আগে মিড-ডে মিল ছাড়া, কয়েকশো টাকা ভাতা ছিল। তা-ও বন্ধ। এখন কাজ করে ছেলে কিছু টাকা আনায় সংসারের সুরাহা হচ্ছে।’’
শুধু স্কুল বন্ধ হওয়াই নয়, করোনার প্রভাবে পরিবারের রোজগার কমায়, অনেকে নিজেদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে বিভিন্ন কাজে বাধ্য হয়ে পাঠাচ্ছেন বলে দাবি করছেন বিড়ি শ্রমিকদের যৌথ সংগ্রাম কমিটির নেতা তথা জয়পুর কেন্দ্রের প্রাক্তন বাম বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘করোনার প্রভাবে কাজের সুযোগ কমেছে। তাই সংসার চালানোর দায়ে শিশুশ্রমিক স্কুলের পড়ুয়াদের এখন খেটে রোজগার করতে হচ্ছে।’’
তবে জেলা শ্রম দফতরের দাবি, কেন্দ্রের নির্দেশমতো ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার সাড়ে চার হাজার শিশু শ্রমিকের মধ্যে অন্তত তিন হাজার পড়ুয়াকে রাজ্য শিক্ষা দফতরের স্কুলগুলিতে ভর্তি করানো হয়েছে। দেড় হাজারের মতো পড়ুয়া, এখনও অন্য কোনও স্কুলে ভর্তি হয়নি। ওই সব নাবালকদের ফের স্কুলমুখী করার দাবি তুলেছেন শিশু শ্রমিকদের স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে যৌথ সংগ্রাম কমিটি। ভীম কুমার বলেন, ‘‘চাইল্ড লেবার স্কুলগুলি খোলার দাবি আমরা কেন্দ্রের ডিরেক্টর জেনারেল অব লেবার ওয়েলফেয়ার দফতরে জানিয়েছি।’’ পুরুলিয়ার সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ অঙ্কনবাবুর দাবি, ‘‘শিশু শ্রমিক স্কুলগুলি খোলার প্রস্তাব বহু বার কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই ব্যবস্থা করা হবে।’’