কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন মহুয়া সুর রায়ও বলছেন, “হোমের আবাসিকেরা ১৮ পার করলেও তাঁদের ভবিষ্যতের একটা দায় আমাদের উপরে থেকেই যায়। আরও বেশি সংখ্যায় কর্পোরেটরা এগিয়ে এলে অনেকেরই ভবিষ্যতের সুরাহা হওয়া সম্ভব।”
ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহের প্ল্যাটফর্মে দু’মুঠো ভাত জোটার অনিশ্চিত জীবনও দেখেছে সেই মেয়ে। তবু বাধার পাহাড় জীবনের স্বপ্ন আর মুখের হাসি ম্লান করতে পারেনি। হাসি অবশ্য তাঁর নামেই মিশে। সবে ১৮ পেরোনো মুসকান শেখ এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মা, শারীরিক ভাবে অশক্ত দিদি এবং বোনের ভরসা হয়ে উঠছেন।
মুসকানের থেকে বয়সে বছরখানেকের বড় মহুয়া পালও সব থেকে কাছের জনেদের কাছে আঘাত পেয়েও জীবনের প্রতি বিশ্বাস হারাতে রাজি নন। বাবা অকালে প্রয়াত। মা থেকেও নেই। তবু বয়সে পিঠোপিঠি ছোট ভাইটাকে নিয়ে ভালবাসার পৃথিবীর স্বপ্নেই প্রত্যয়ী মহুয়াও। সমাজকল্যাণ দফতরের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (শিশুকল্যাণ সমিতি বা সিডব্লিউসি) মারফত হোমের জীবন শেষে তাঁর জন্যও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দরজা খুলে গিয়েছে।
মুসকান, মহুয়ারা কালিকাপুরের হোমে থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন সল্টলেকের সুকন্যা হোম থেকে আসা দু’জনও। এমন কারও কারও শৈশব পরিবারের ভিতরেই নির্যাতনের বিষে ক্লেদাক্ত। এখন এমন পাঁচ জন মেয়ে মিলে বানতলার চর্মনগরীর একটি সংস্থায় চাকরি করছেন। সিডব্লিউসি তথা সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কর্পোরেট গাঁটছড়ায় ক্রমশ জীবন বদলাচ্ছে তাঁদের। সমাজকল্যাণ দফতরের উদ্যোগেও রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হোমের আবাসিকদের ক্ষমতায়নের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা কার্যকর করা চলছে।
সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের কথায়, “প্রতিকূল শৈশব বা জীবনের নানা দুর্যোগে ছোট ছেলেমেয়েদের হোমে ঠাঁই দিলেও ১৮ পার করে তারা কী করবে, সেটা ভাবনার বিষয়! কয়েকটি নির্দিষ্ট তালিমের প্রকল্প রয়েছে রাজ্য জুড়ে। কিন্তু কোভিডে দু’টো বছর সেই সব উদ্যোগ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। তাই সদ্য তরুণ ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করাটাও আমাদের দায়িত্ব। নতুন নতুন কর্পোরেটের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরির চেষ্টা চলছে।”
অতিমারির আগেই একটি বেসরকারি গাড়ি সংস্থা এবং রাজ্যের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মসংস্থানের কিছু রাস্তা খোলে সমাজকল্যাণ দফতর মারফত। খুচরো বাজার বা শপিংমলের কাজেও হোমের সদ্য তরুণদের কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু করোনাকাল পেরিয়ে আরও নতুন সুযোগের খোঁজ চলছে। তারই অঙ্গ হিসাবে হোমের মেয়েদের নিয়োগ চলছে বানতলা চর্মনগরী কিংবা কেশ বা সৌন্দর্য চর্চার কয়েকটি সর্বভারতীয় সংস্থায়। বানতলার সংস্থাটির কর্ণধার সঞ্জয় ওয়াধওয়া যেমন কয়েকটি সরকারি হোমে কারখানার যন্ত্র পাঠিয়ে তালিমের বন্দোবস্ত করেছেন। তাঁর সংস্থার সমর বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “গত এক বছরে ছ’জন মেয়ে চাকরি পেয়েছেন। চামড়ার নানা পণ্য তৈরি শিখছেন। মেয়েদের নিরাপদে থাকার জায়গার বন্দোবস্ত করতে পারলে আরও বেশ কয়েক জনের নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।” একটি সর্বভারতীয় সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত কোহিনুর মণ্ডলও আশাবাদী, ‘‘তালিম দিয়ে হোমের আবাসিকদের এই পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ খুলে যাচ্ছে।” পাঁচতারা হোটেলের মাধ্যমে বিউটিশিয়ান কোর্সে তালিমের কিছুটা চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।
কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন মহুয়া সুর রায়ও বলছেন, “হোমের আবাসিকেরা ১৮ পার করলেও তাঁদের ভবিষ্যতের একটা দায় আমাদের উপরে থেকেই যায়। আরও বেশি সংখ্যায় কর্পোরেটরা এগিয়ে এলে অনেকেরই ভবিষ্যতের সুরাহা হওয়া সম্ভব।”