উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাকে আলাদা করার দাবি তুলেছিলেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিজেপি নেতাদের একাংশ প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলছিলেন। এই দাবি কখনও আলিপুরদুয়ার থেকে উঠেছে, কখনও পাহাড় থেকে। বুধবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টি বিষয়কেই আলাদা ভাবে সামনে আনেন। তিনি স্পষ্ট করে দেন, কেএলও-র প্রাক্তন জঙ্গিই হোক বা নেতা, বা পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতা, রাজ্য ভাগের কারও উদ্দেশ্যই তিনি সফল হতে দেবেন না।
প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় নিয়ে বলেন, ‘‘কেউ কেউ ওখানে উস্কানোর চেষ্টা করছে। দার্জিলিং যেন শান্তিপূর্ণ থাকে। জাতিগত সমস্যা তৈরি করতে কেউ কেউ চেষ্টা করছে। পাহাড়কে অশান্ত করতে। আমি তা করতে দেব না। পাহাড় শান্তিতে ছিল, আছে এবং থাকবে।’’ তার পরেই তাঁর সাফ কথায়, ‘‘কারও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আমি পাহাড়কে টুকরো করতে দেব না। পাহাড়ের ঐক্য ভাঙতে দেব না। পাহাড়ের উন্নয়ন ভাঙতে দেব না।’’ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা জানাচ্ছেন, পাঁচ বছর আগে এমনই এক গ্রীষ্মে ভরা পর্যটন মরসুমে হঠাৎই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ডাকেন বিমল গুরুং। তার পরে অনেক কিছু বদলেছে। এক সময় ফেরার গুরুং তৃণমূলের হাত ধরেছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি কিছুটা বেসুরো। আর তাঁর এক সময়ের সঙ্গী বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা, যিনি এখন কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক, তিনি মাঝে মাঝেই পাহাড়কে আলাদা রাজ্য করার দাবি তুলছেন। ফলে নতুন করে সমস্যা হতে পারে, আশঙ্কা বিভিন্ন মহলে। মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে পাহাড়ে অনেক হোটেল তৈরি হয়েছে। এখন একটা হোটেল খালি নেই। দার্জিলিংকে সবাই এত ভালবাসে। এটাই বজায় রাখতে হবে।’’ বিজেপির শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যে যেখানে যা অশান্তি হচ্ছে, সবের মূলে তৃণমূল। এখানে তেমন কিছু হলে ওঁর দলই সে জন্য দায়ী।’’
একই ভাবে কেএলও প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেএলও-র সবাইকে তো চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাতেও দু’-একজন বড় বড় কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে চাই। বাবারে বাবা!” বিধানসভা ভোটের পরে একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ করে কেএলও প্রধান জীবন সিংহ আলাদা রাজ্যের দাবি তোলেন। সূত্রের খবর, তিনি এখন মায়ানমারে গোপন ঘাঁটিতে রয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ইঙ্গিতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর সঙ্গে শান্তি আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করছেন। এরই মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে দুই সন্দেহভাজন কেএলও জঙ্গিও ধরা পড়েছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, কেএলও ফের উত্তরের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে প্রশাসনের একটি অংশ মনে করছে। এই অবস্থায় হিমন্তের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজ্যের কয়েক জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত তাঁদের কারও দিকে কি না, তাই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ ওখানে গিয়ে তরাই-ডুয়ার্স চাইছে। আলিপুরদুয়ার-জলপাইগুড়িতে বসে। ওরা হাঁ করে বসে থাকুক। বাংলা বাংলাতেই থাকবে।”