সাগরদিঘি নিয়ে অধীরকে তোপ মমতার। — ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘি বিধানসভার হার নিয়ে এ বার সরাসরি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে ফোন মারফত বৈঠক করেন তিনি। মমতা দাবি করেন, সাগরদিঘিতে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির অনৈতিক জোট হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘সাগরদিঘিতে অনৈতিক লড়াই করেছে। লোকটা কার? বিজেপির। প্রার্থী কংগ্রেসের। সমর্থন দিল সিপিএম। আসলে অধীর চৌধুরী আরএসএসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’’ ২ মার্চ সাগরদিঘি উপনির্বাচনে ফলপ্রকাশ হলে দেখা যায় তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বায়রন বিশ্বাস। ওই দিনই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে অনৈতিক জোট করার অভিযোগ এনেছিলেন মমতা। রবিবার আবারও একই অভিযোগ শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। সাগরদিঘিতে টাকার খেলা চলেছে।” তিনি আরও বলেন, “গোটা জেলা জুড়ে একটা চক্রান্ত চলছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।” রাজ্যের পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় স্তরেরও বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়ার অভিযোগ করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী যত দিন থাকবেন, মোদীকে কেউ খারাপ ভাববে না। সে জন্য রাহুলকে নেতা বানানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। আমি দিল্লিতে তোমার সঙ্গে দোস্তি করব, আর এখানে তুমি বিজেপির সঙ্গে মস্তি করবে! আমি বিজেপির কাছে মাথা নত করিনি, মাথা নত করেছে কংগ্রেস।’’
মমতার আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে জোট করে বাংলায় কে এনেছিল তা সবাই জানে। ১৯৯৮ সালে প্রথম বার জোট করে বাংলায় বিজেপিকে প্রথম লোকসভা আসন পেতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। এখন তো বিজেপি বিরোধী জোটকে দুর্বল করার কাজ করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। তাঁর একটাই লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সন্তুষ্ট করা। নিজের পরিবারকে বাঁচাতে এখন তিনি মোদীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁর মতো একজন অনৈতিক ব্যক্তিত্বর কোনও আক্রমণকে আমরা কিছু মনে করি না। এত দিনে দিদির আসল জায়গায় আমরা ধাক্কা দিতে পেরেছি। তাই তিনি রাগে এ সব কথা বলছেন।’’
জবাবে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যিনি সারা জীবন নীতি-নৈতিকতার ধারেকাছে যাননি তিনি এখন আমাদের নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেবেন? আসলে তাঁর দলের নানা অনৈতিক কাজের জন্যই তো সাগরদিঘির মানুষ তাঁদের ভোট দেননি। ৩২ হাজার এমন মানুষ সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে ভোট দেয়নি, যাঁরা ২০২১ সালের ভোটের তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। তাঁরা যে তৃণমূলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই বাম-কংগ্রেস জোটকে বেছে নিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট।’’ আবার বিজেপি নেতা রাহুল সিংহর জবাব, ‘‘যে সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের সম্পত্তি ভেবে নিয়েছিলে মুখ্যমন্ত্রী, তা হাতছাড়া হতেই মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের আক্রমণ করছেন। কিন্তু সাগরদিঘির ভোট কেন অপর দিকে চলে গিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখতে তৃণমূল নেতাদের কুকীর্তিই সামনে আসবে। তাই সেই সত্যিটা মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করতে চাইছেন না।’’