বিধানসভা অধিবেশন কক্ষের অন্দরে প্রবেশ করতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হন ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিশ। ছবি: সংগৃহীত।
বিধায়ক ইদ্রিশ আলিকে বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে কড়া নির্দেশ দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই বিধানসভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভা অধিবেশন কক্ষের অন্দরে প্রবেশ করতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হন ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিশ। তখনই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সটান বলেন, ‘‘তুমি মুখ খারাপ করবে না! তোমার জন্য দলের নাম খারাপ হচ্ছে!’’ ইদ্রিশকে সরাসরি ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য ধমক খাওয়ার কথা স্বীকার করেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, ঘটনাটি ঘটেছিল।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তুভ বাগচী। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হলে একযোগে মুখ্যমন্ত্রীর শাসনপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। মধ্যরাতে কেন কৌস্তুভের বাড়িতে পুলিশ গেল এবং সকালেই তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হল, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়াভাষায় আক্রমণ করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে শুরু করে রাজ্যের বামনেতারা। বিরোধীদের ওপর ‘পুলিশি হেনস্থা’র অভিযোগ করে সরব হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। সেই সময় বিরোধীদের ‘কড়াভাষায়’ জবাব দিয়েছিলেন ইদ্রিশ।
ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিশ বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বই লিখে যদি কেউ অপপ্রচার করার চেষ্টা করে, তার বা তাদের হাত-পা কেটে নেওয়া হবে! জিভ কেটে নেওয়া হবে।’’ ইদ্রিশ আরও বলেছিলেন, ‘‘অসভ্য বর্বর বিজেপি, জামা-খোলা কংগ্রেস অধীর চৌধুরী, দুধে-সোনা বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষরা আবার যদি মিথ্যা ভাবে বই প্রচার করে, তাদের মুখমণ্ডলটা পাল্টে দেওয়া হবে।’’
ইদ্রিশের ওই হুমকি নিয়ে শোরগোল ওঠে। কিন্তু তার পরেও ওই বিধায়ক কোনও ভাবে তাঁর মন্তব্য থেকে পিছু হটেননি। তবে দলের অন্দরে ইদ্রিশের বক্তব্য নিয়ে অভিযোগ তৈরি হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর গোচরেও তা আনা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী ইদ্রিশকে সরাসরি সতর্ক করেছেন বলে দলের নেতারা জানাচ্ছেন।
ইদ্রিশের অবশ্য দাবি, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। সোমবার বিধানসভা ভবন চত্বরে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, সামনে পঞ্চায়েত ভোট। এই সময়ে দলনেত্রী মমতা ‘অহেতুক’ কোনও বিতর্ক চান না। তাঁর দলের কোনও নেতা এই ধরনের কুকথাজনিত কোনও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, তা-ও চান না তিনি। তাই নিজেই ইদ্রিশকে ধমক দিয়ে মুখে লাগাম পরাতে বলেছেন। তার পর থেকে ইদ্রিশের মুখে অবশ্য কোনও হুমকি শোনা যায়নি।