জ্য়োতি বসু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জ্যোতি বসু বাজেট পড়েছিলেন। সেটা ১৯৮২ সাল। তার পর এ বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বাজেট পড়বেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব কিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পড়বেন মমতা।
একুশের ভোটের আগে এটাই শেষ বাজেট। সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুযায়ী, বাজেট পেশ করার দায়িত্ব থাকে অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ির বাইরে বেরনো নিষেধ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের। এ বারের রাজ্য বাজেট পেশ করতে পারবেন না তিনি। তাই শুক্রবার বিকেলে বিধানসভায় বাজেট ভাষন পড়বেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। দুপুরে ‘বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটি’-র বৈঠকে সে বিষয়ে অনুমতি চাওয়া হতে পারে বলে বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে আগেও ঘটেছে। ১৯৮২ সালে বামফ্রন্ট জমানায়। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। দলের সঙ্গে মত পার্থক্যের জেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। ছেড়ে দেন যাদবপুরের বিধায়ক পদও। তাই জরুরি ভিত্তিতে দফতরের দায়িত্ব নেন মুখ্যমন্ত্রী। সে বার বাজেট পেশ করেছিলেন জ্যোতিবাবুই।
প্রতিটি অর্থবর্ষের শুরুতে রাজ্যের আর্থিক বিবরণ পেশ করতে হয় বিধানসভায়। রীতি মেনেই নিতে হয় খরচের অনুমোদন। অর্থনীতির ভাষায় যা রাজ্য বাজেট বলে পরিচিত। কিন্তু বিধানসভা ভোট থাকায় এবার আর পুর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হচ্ছে না। আগামী কয়েক মাসের আর্থিক খরচের জন্য এই বাজেট হচ্ছে। অর্থনীতির পরিভাষায় যা ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাই এই বাজেট পেশ করে থাকেন। তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে বিধানসভার অধ্যক্ষ চাইলে অন্য কোনও মন্ত্রীও বাজেট পেশ করতে পারেন। যা নিয়ে সচরাচর কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নিজেরই বাজেট ভাষণ পড়ার নজির কম।
১৯৮২ সালের পর এই দ্বিতীয়বার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাজেট বক্তৃতা পড়বেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে চিঠি দিয়ে এ বছর বাজেট পড়া থেকে অব্যাহতি চান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং উপদেশেই তিনি রাজ্যপালকে চিঠিটি লিখেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে বাজেট পাঠের অনুমতি দেওয়ার জন্য ওই চিঠিতেই প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। আর বৃহস্পতিবার টুইট করে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে বাজেট বক্তৃতা করার অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েওছেন।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘শুনলাম অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর অসুস্থতার কারণেই মুখ্যমন্ত্রী বাজেট পেশ করবেন। তবে এর অন্য কারণও থাকতে পারে। ভোটমুখী বাজেটে বড় কোনও ঘোষণা থাকতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি উপভোক্তা তৈরির কোনও প্রকল্প ঘোষণা করে দিতে পারেন বিধানসভায়।’’ ১৯৮২ সালের সঙ্গে এবারের পরিস্থিতিকে এক করে দেখতে নারাজ বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। এ প্রসঙ্গে যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক বলেছেন, ‘‘দু’টি পরিস্থিতিতে এক করে দেখলে হবে না। সে বার রাজ্যে কোনও অর্থমন্ত্রী না থাকায় জ্যোতিবাবু বাজেট পেশ করেছিলেন। কিন্তু এ বার অর্থমন্ত্রী থেকেও অসুস্থতার কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে বাজেট পেশ করতে হচ্ছে।’’