রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচ সম্পর্কে অনবহিত শ্রমিক শ্রেণির সাধারণ মানুষজন কী ভাবে রাজনীতির খেলার উপকরণ হয়ে উঠতে বাধ্য হন, সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলায় খোদ বিচারপতিই তার ব্যাখ্যা দিলেন। গ্রামের শ্রমজীবী মানুষজনকে কার্যত ‘রাজনীতির বোড়ে’র সঙ্গে তুলনা করলেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। সম্প্রতি হাওড়ার এক ব্যক্তির মৃত্যু সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন তিনি এই মন্তব্য করেন। ওই মামলায় অভিযুক্তদের ‘রাজনীতির বোড়ে’ হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কৃষিমজুরের কাজে যুক্ত এই মানুষগুলি রাজনীতি সম্পর্কে কার্যত কোনও জ্ঞান না-নিয়েই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়েছিলেন। হাওড়া শ্যামপুর থানার ওই ঘটনায় উলুবেড়িয়া আদালত যে-সাজা ঘোষণা করেছিল, তা-ও কমিয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট। মূল অভিযুক্তকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ থেকেও মুক্ত করেছে আদালত।
আদালত সূত্রের খবর, ২০০৮-এর ১৫ মে হাওড়ার শ্যামপুরে পঞ্চায়েত ভোটে কালীতলায় সিপিএম এবং তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সংঘাতে সাদ্দাম কাজি ফকির নামে এক ব্যক্তি মারা যান। সালাম মল্লিক-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। উলুবেড়িয়া আদালতে এক জন ছাড় পেলেও সালামের তিন বছর এবং অন্য আট জনের দু’বছরের কারাদণ্ড হয়। ওই আট জনের মধ্যে কয়েক জন গৃহবধূও রয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে হাই কোর্টে আপিল মামলা করা হয়।
আপিল মামলায় হাই কোর্ট ইমতাজ় আহমেদ নামে এক আইনজীবীকে আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। তিনি তদন্তের বিভিন্ন তথ্য তুলে দেখান যে, তদন্তে অনেক ফাঁকফোকর ছিল। উলুবেড়িয়া আদালতের বিচারক সেই তথ্যগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দেননি। অভিযোগ, সাদ্দামের মাথায় সালেম লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল। তার ফলেই মৃত্যু হয়। কিন্তু ময়না-তদন্তে সালেমের মাথায় একাধিক আঘাত পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে কোনটি সালেমের আঘাতে সৃষ্ট এবং সেই আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। সরকারি আইনজীবী পাল্টা যুক্তি দেখালেও হাই কোর্ট আদালতবান্ধবের যুক্তিই মেনে নিয়েছে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ না-টিকলেও মারধরের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তবে সেই অপরাধের নিরিখে গত ১৪ বছর ধরে এই ন’জন যে-ভাবে বিচারের জন্য মানসিক উৎপীড়ন সহ্য করতেছেন, তা-ও কম নয়। সেই সব দিক বিচার করে সালাম-সহ ন’জনকে এক বছরের সাজা এবং মাথাপিছু এক হাজার টাকা জরিমানা করেছে হাই কোর্ট। তাঁরা যে-ক’দিন জেলবন্দি ছিলেন, সাজার মেয়াদ থেকে সেই সময়টা বাদ দিতে হবে বলেও জানিয়েছে কোর্ট।