দশক পরে ছত্রধর চর্চা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ছত্রধরকে সামনে রেখে ২০২১ সালে ভোটের আগে জঙ্গলমহলের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে তৎপর হবে তৃণমূল।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share:

ছত্রধর মাহাতো।—ফাইল চিত্র।

তিনি নিজে জানিয়েছেন, তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই ভাববেন। ছত্রধর মাহাতোর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জঙ্গলমহলের ভাবনা অবশ্য থেমে নেই। দীর্ঘ দশ বছর পরে ফের রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে ছত্রধর।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ছত্রধরকে সামনে রেখে ২০২১ সালে ভোটের আগে জঙ্গলমহলের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে তৎপর হবে তৃণমূল। ছত্রধর যে সমাজের প্রতিনিধি, সেই আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো অবশ্য বলছেন, ‘‘ছত্রধর জেল থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের জন্য আন্দো‌লন করলে স্বাগত। তবে উনি যদি কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ধরেন, সেটা ওঁর নিজের পক্ষেও ভাল নয়, এলাকার মানুষের পক্ষেও ভাল নয়।’’

পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির সাজাপ্রাপ্ত নেতা ছত্রধরের যাবজ্জীবন কারাবাসের মেয়াদ কমিয়ে দশ বছর করেছে হাইকোর্ট। প্রায় দশ বছর জেল খেটে ফেলেছেন ছত্রধর। ফলে, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এলাকায় ফিরবেন। ছত্রধরের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁর জেল থেকে বেরনো এখন সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু জঙ্গলমহলে ফিরে আগের মতো জনসমর্থন পাবেন তো? ছত্রধ‌র নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘আদিবাসী মানুষ যাকে একবার ভালবাসেন তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন না। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালে, তাঁরাও আমার পাশে থাকবেন।’’

Advertisement

ছত্রধরের তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা যে রয়েছে, তার ইঙ্গিত দলের জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেনের মন্তব্যেও। বিরবাহা বলেন, ‘‘ছত্রধর ফিরে এসে কী করবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। উনি তৃণমূলে যোগ দিতে চাইলে ব্যক্তিগত ভাবে আমি স্বাগত জানাব। বাকিটা দলের বিচার্য বিষয়।’’ আর এখানেই বিঁধছে বিরোধীরা। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর কথায়, ‘‘জঙ্গলমহলে পায়ের তলার মাটি সরে যেতেই তৃণমূল ছত্রধরকে মাঠে নামানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। কিন্তু এতে লাভ হবে না। ছত্রধর জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। এলাকার মানুষও জানেন, জনসাধারণের কমিটি আসলে মাওবাদীদেরই মদতপুষ্ট সংগঠন ছিল।’’

ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তাপস মাহাতোর মতে, ‘‘আইনের চোখে, এলাকাবাসীর চোখে ছত্রধর কিন্তু দেশদ্রোহী। সাজা কমলেও তিনি কিন্তু জেলখাটা আসামী। বাম আমলে মাওবাদীদের নিয়ে এসেছিল তৃণমূল। জনসমর্থন হারিয়ে এখন সেই ছত্রধরকে ভর করতে চাইছে শাসকদল।’’ তাপসের আবার আশঙ্কা, ছত্রধরকে সামনে রেখে আবার রক্তক্ষয়ী পর্ব ফিরবে না তো! ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদার কথায়, ‘‘ছত্রধর তৃণমূলের ছাতা ধরলে এলাকার মানুষ শাসকদলের থেকে আরও সরে যাবেন। অতীত মানুষ ভুলে যাননি।’’

শনিবারই ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ছত্রধর প্রসঙ্গে সূর্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা জানি মুখ্যমন্ত্রী ওঁর সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে গিয়েছিলেন। তারপরে অবশ্য ওঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন আবার হাত ধরেছেন। উনিও হাত ধরাধরি করছেন। রাজনৈতিক কারণে আমাদের লক্ষাধিক কমরেডের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে, সেগুলোও প্রত্যাহার করা জরুরি।’’ মাওবাদী হামলায় নিহত ও নিখোঁজদের সকলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ারও দাবি তুলেছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement