স্বাগত: লালগড় তৃণমূল অফিসের সামনে সংবর্ধনা ছত্রধর মাহাতোকে। রয়েছেন ছত্রধরের মা বেদনবালাও। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
পরনে নীল-সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। জঙ্গলমহলের উন্নয়ন আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাও করছেন খোলা গলায়।
তৃণমূলের সংবর্ধনায় ভেসেই রবিবার লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে ফিরলেন একদা জঙ্গলমহলে জনসাধারণের কমিটির মুখপাত্র ছত্রধর মাহাতো। দীর্ঘ এক দশক জেল খাটার পরে জামিনে মুক্ত মানুষটাকে যাত্রাপথে বারবার থমকাতে হল। কখনও ফুলের তোড়া ধরালেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভানেত্রী বিরবাহা সরেন, কখনও সংবর্ধনা দিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, তো কখনও যুব তৃণমূলের নেতারা। ঝাড়গ্রাম শহরে জেলা তৃণমূলের নেতা দুর্গেশ মল্লদেব তো ছত্রধরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন। আর লালগড় ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে ছত্রধরের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় ‘মা-মাটি মানুষের’ উত্তরীয়।
তবে কি তৃণমূলেই যোগ দেবেন?
ছত্রধরের জবাবে কিন্তু দো-টানা। বললেন, ‘‘আগে তৃণমূলে ছিলাম। পরে জনসাধারণের কমিটির স্বতন্ত্র আন্দোলন করেছি। দল থেকে বিচ্যুত হয়েছিলাম। তাই এখন নিজেকে তৃণমূলের সদস্য বলতে পারি না। আর কী করব মনস্থির করিনি। সবে মুক্ত আকাশ দেখতে পেয়েছি। পরিবারের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটাব। তার পরে ঠিক করব।’’ এ দিন লালগড় ব্লক তৃণমূল কার্যালয়েও ঢোকেননি ছত্রধর।
গত লোকসভায় জঙ্গলমহলে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। উত্থান হয়েছে বিজেপি-র। এই পরিস্থিতিতে ছত্রধরের ফেরা এবং তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জঙ্গলমহলের রাজনীতির অঙ্ককে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। জনগণের আন্দোলনে ছত্রধরের সঙ্গীদের প্রায় সকলেই এখন তৃণমূলে। আন্দোলন পর্বে ছত্রধরের ছায়াসঙ্গী, বর্তমানে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো এ দিনও আগাগোড়া সঙ্গে ছিলেন। ছিলেন পুরনো সঙ্গী মনোজ মাহাতো, অসিত মাহাতো, ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি তন্ময় রায়। শ্যামলরা সরাসরিই বলছেন, ‘‘দাদা যাতে তৃণমূলে আসেন, সে জন্য চেষ্টা করব।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহারও বক্তব্য, ‘‘উনি যদি তৃণমূলে যোগ দেন অবশ্যই আমরা স্বাগত জানাব।’’ বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সিপিএমকে সরাতে ছত্রধরকে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল। দশ বছর কারাবাস কাটিয়ে আসা ছত্রধর আশা করি এতদিনে সেটা বুঝেছেন।’’
এ দিন দুপুরে পুলিশের গাড়ির পাহারায় স্ত্রী নিয়তি ও বড়ছেলে ধৃতিপ্রসাদের সঙ্গে কলকাতা থেকে এসে পৌঁছন ছত্রধর। এখন থেকে তিন জন সশস্ত্র পুলিশ ছত্রধরের সঙ্গে থাকবেন। আইনজীবী কৌশিক সিংহ জানালেন, মোট ২৮টি
মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন ছত্রধর। তার মধ্যে ১২টিতে তিনি বেকসুর মুক্ত। ১৫টিতে জামিন পেয়েছেন। আর ইউএপিএ-মামলায় যাবজ্জীবনের মেয়াদ কমে যাওয়ায় সাজা খাটা
শেষ হয়েছে।
এ দিন দহিজুড়ি থেকে তৃণমূল কর্মীরা বাইক মিছিল করে ছত্রধরকে লালগড় সেতু পর্যন্ত নিয়ে
আসেন। গাড়ি থেকে নেমে সেতুটা দেখেন ছত্রধর। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ন’বছরে জঙ্গলমহলে যে পরিবর্তন এনেছেন, তা গত ষাট বছরে হয়নি। যে স্বপ্ন আমি ও আমার সহযোগীরা দেখেছিলাম,
তার অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। আসার পথে অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখেছি। বদলে যাওয়া লালগড়কে চিনতেই পারছি না।’’
ছত্রধরকে ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাস কিন্তু আগের মতোই রয়েছে। এ দিন ভিড়ের মাঝে দেখা গিয়েছে প্ল্যাকার্ড— ‘জননেতা ছত্রধর মাহাতো সু-স্বাগতম’। স্লোগান উঠেছে ‘জঙ্গলমহলের জননেতা ছত্রধর মাহাতো জিন্দাবাদ’।
ছত্রধরও বলছেন, ‘‘শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমি জনগণের সেবাই করব।’’