বাঁ দিকে, মহাজাতি সদানের বাইরে ছাত্র পরিষদের সভা। ডান দিকে, হাসপাতালে আনা হচ্ছে ছাত্র পরিষদ সভাপতি সৌরভ প্রসাদকে।
ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল কলকাতায়। মহাজাতি সদন চত্বরে সভা করার অনুমতি না পেয়ে পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে সংগঠনের পতাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খেলেন নেতা-নেত্রীরা। এই ঘটনাকে সামনে রেখেই ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এআইসিসি-কে জানিয়ে দিলেন, জাতীয় স্তরে সনিয়া গাঁধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করলেও এ রাজ্যে শাসক তৃণমূলের আচরণ সম্পূর্ণ অন্য রকম!
তৃণমূলের তরফে ঘটনা নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্যই কিছু বাধা-নিষেধ ছিল। সেটা মাথায় রেখে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করলে ভাল হতো। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা বিধি মেনেই হয়েছে।’’
এ বারই প্রথম ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের চিরাচরিত জায়গা মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠানের অনুমতি ছিল না, বাইরে ম্যারাপও ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ। করোনা পরিস্থিতির কারণে কংগ্রেসের মূল ছাত্র সংগঠন অনুমতি না পেলেও মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির নীচে শুক্রবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ-সভা হয়েছে। যার জেরে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতারা। সংলগ্ন রাস্তায় ম্যাটাডোরের উপরে এ দিন ৬৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসের সভার পরে মহাজাতি সদনের পাঁচিল টপকে ভিতরের প্রাঙ্গনে সংগঠনের পতাকা তুলতে গিয়েছিলেন নেতা-নেত্রীরা। তখনই পুলিশ মারধর করে বলে অভিযোগ। সর্বভারতীয় সংগঠন এনএসইউআই-এর সম্পাদক রোশনলাল বিট্টু, ছাত্র পরিষদের সভাপতি সৌরভ প্রসাদ, দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৩০ জনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। মারধরের জেরে সৌরভের কলার বোনে গুরুতর চোট লাগায় তাঁকে পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দিল্লিতে বসেই প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য ঘটনার রিপোর্ট দিয়েছেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালকে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের হাতে পুলিশ-প্রশাসন ব্রিটিশ পুলিশের মতো আচরণ করছে! ছাত্র পরিষদের কোনও বিক্ষোভ ছিল না। মহাজাতি সদনে ভাঙচুর করতেও তারা যায়নি। পতাকা তুলতে যাওয়ায় পুলিশ মারধর করেছে।’’ তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন যাদের রাজনীতির আঁতুড় ঘর, তারাই পুলিশ দিয়ে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভা ভাঙছে। তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করার সময়ে এআইসিসি যেন বাংলায় এমন ‘দ্বিচারিতা’র কথা মনে রাখে— এই দাবি তিনি জানিয়েছেন বেণুগোপাল মারফত। ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও।
ম্যাটাডোর-মঞ্চের সংক্ষিপ্ত সভায় এ দিন ছিলেন দেবপ্রসাদ রায়, অসিত মিত্র, অমিতাভ চক্রবর্তী, শুভঙ্কর সরকার-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। তৃণমূলের মতোই নিট-জেইই জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয় সেখানে। মহাজাতি সদনের যে ঘরে ছাত্র পরিষদের জন্ম, সেই ঘর ফিরিয়ে দেওয়া এবং সংগঠনের প্রাণপুরুষ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মূর্তি প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন তাঁরা।