চে গেভারার কন্যা আলেইদা ও দৌহিত্রী এস্তেফানিয়া মাচিন গেভারা। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক অনুষ্ঠানে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক নিজস্ব চিত্র।
মঞ্চের দু’ধারে বড় পর্দায় ঘুরে-ফিরে চে গেভারা, ফিদেল কাস্ত্রো থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর রণাঙ্গনের দৃশ্যও পর পর ফুটে উঠছে। দর্শকাসনে প্রথম সারিতে বাধ্য ছাত্রের মতো বসে মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, মনোজ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বামফ্রন্টের নেতারা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন এয়ার থিয়েটারে শুক্রবার বিকেলে তাঁদের এবং গ্যালারি জুড়ে ভিড় করা ছাত্র, যুবদের সম্ভাষণ করলেন আলেইদা এস্তেফানিয়া গেভারা।
চে গেভারার কন্যা, কিউবাবাসী চিকিৎসক আলেইদা সভায় উপস্থিত জনতাকে বললেন, ‘‘আরও পড়াশোনা করতে হবে এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। বিশ্ব জুড়ে এটাই চে গেভারার আদর্শ। এ ভাবেই এই কঠিন পৃথিবীর মধ্যে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’ দীর্ঘ ২৪ বছর বাদে চে-কন্যার এই কলকাতা-সফর। দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলছিলেন আলেইদা। মঞ্চে মায়ের সঙ্গে হাজির এস্তেফানিয়া মাচিন গেভারাও (চে-র দৌহিত্রী)। তিনি আবার অর্থনীতির অধ্যাপক।
ছ’বছর বয়সে পিতৃহারা হলেও জীবনভর বাবার আদর্শে বড় হওয়ার কথাই বলছিলেন চে-কন্যা। তিনি বললেন, ‘‘আমি মনে করি, চে-র বিশ্ববীক্ষা আমায় বড় করে তুলেছে। চে শুধু শার্টে আঁকা ছবি নয়, হৃদয়ের ব্যাপার। তাঁর পথে এগিয়ে যাওয়া আমাদের পথ।’’ শুনে হাততালিতে ফেটে পড়েছে জনতা। চে-কন্যা এ দিন বলেছেন, তিনি কিউবায় বড় হয়ে নিজেকে সারা বিশ্বের বলেই মনে করেন। সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা (এআইপিএসও) আয়োজিত চে কন্যা ও দৌহিত্রীর এই সংবর্ধনা আসরটিতে যেন মিশে যায় বাংলা ও কিউবার আবেগ। রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি’ এবং হোসে মার্তির লেখা গুয়ান্তানামেরা-ই অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দিয়েছিল। চে-কন্যা বলেছেন, ‘‘অন্যের কথা ভাবা, মানুষের ভাল করতে চাওয়ার শিক্ষাই আমার আদর্শ।’’ উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু প্রমুখ।
কলকাতায় পা দিয়ে এ দিন আলেইদা গিয়েছিলেন আইএসআই-এ। দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি আগে চে এসে যেখানে গিয়েছিলেন, সেই তিনটি ঘর ঘুরে দেখে আইএসআই-এর শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতা সারেন আলেইদা। তার পরে বরানগরের টবিন রোডের মোড়ে এআইপিএসও-র উদ্যোগে আলেইদা ও এস্তেফানিয়ার সংবর্ধনার আয়োজন ছিল। সেখানে হাজির ছিলেন ছাত্র, যুব, মহিলা-সহ সিপিএমের গণ-সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা। কলেজ স্ট্রিটে আজ, শনিবার চে-কন্যার জন্য কেন্দ্রীয় সংবর্ধনার অনুষ্ঠান রয়েছে। হেদুয়ার স্বাস্থ্যমেলায় ঘুরে সন্ধ্যায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা-সভায় থাকার কথা তাঁর।
বরানগরে চে-কন্যা আলেইদা গেভারার সংবর্ধনা নিজস্ব চিত্র।
তবে শনিবার সকালে চন্দননগরে যাওয়া হচ্ছে না আলেইদার। পরিবর্তে অনুষ্ঠান হবে হুগলি জেলারই উত্তরপাড়ায়। চন্দননগরের উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, প্রথমে শহরের রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ‘রাজনৈতিক অনুষ্ঠান’ তকমা দিয়ে তা বাতিল করা হয়। এর পরে মানকুণ্ডু সার্কাস মাঠে ওই অনুষ্ঠান করতে চাইলেও মহকুমাশাসকের অনুমতি মেলেনি। পরে চে-কন্যা চন্দননগরের ফরাসি স্থাপত্য দেখতে আসবেন, এই আবেদন জানিয়েও বিফল হতে হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, সার্কাস মাঠে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহকুমাশাসক সংযুক্ত নাগরিক কমিটির সম্পাদককে চিঠি দিয়ে ওই দুই বিদেশি অতিথির চন্দননগরে আসা বা থাকার ব্যাপারে রেজিস্ট্রেশন অফিসারের অনুমতিপত্র এবং ওই সংগঠনের তরফে তাঁদের অনুষ্ঠান করা নিয়ে ভারত সরকারের ছাড়পত্র জমা দিতে বলেন। উদ্যোক্তারা তা দিতে পারেননি। এতে রাজনীতির হাত দেখছেন উদ্যোক্তারা। সিপিএমের চন্দননগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক পিনাকী চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুরসভা এবং মহকুমাশাসকের থেকে অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি। একই জেলায় দু’রকম ব্যাপার! মনে হচ্ছে, রাজ্যের এক জন মন্ত্রী চাননি বলেই চন্দননগরে অনুমতি মেলেনি।’’
মেয়র রাম চক্রবর্তী অবশ্য অভিযোগ খারিজ করে বলেছেন, রবীন্দ্রভবনে ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি ছোটদের ছায়াছবি উৎসব হবে। তার প্রস্তুতি চলছে বলে ওই প্রেক্ষাগৃহ দেওয়া সম্ভব ছিল না। উদ্যোক্তাদের জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সভাগৃহে অনুষ্ঠান করতে বলা হলেও আয়তন ছোট বলে ওঁরা করতে চাননি। রাজনীতির কোনও ব্যাপার এতে নেই।