ত্রাণ বিলি ঘিরে গঙ্গারামপুর পুরসভায় হুলস্থুল।
পুরসভায় চলছে চূড়ান্ত অচলাবস্থা। তৃণমূলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন দলীয় কাউন্সিলররাই। আর সেই অচলাবস্থার মধ্যেই, ত্রাণ বিলি নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড ঘটল গঙ্গারামপুর পুরসভায়। পুরসভার ত্রাণঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায়, জেলা ত্রাণ আধিকারিককে প্রায় দু’ঘণ্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন বানভাসি দুর্গতরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, মহকুমা শাসকের দফতর থেকে ত্রাণ বিলি করা হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, ত্রাণ বিলি নিয়ে অভিযোগ ওঠাতেই এই সিদ্ধান্ত।
ঘটনার সূত্রপাত বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রের ত্রাণ দেওয়ার উদ্যোগকে ঘিরে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার জেরে উত্তরবঙ্গের বহু এলাকার মতো গঙ্গারামপুর পুর এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডও জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহ ভারী বৃষ্টিপাত না হলেও, এখনও অনেকেই ঘরছাড়া।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুর্গতদের ত্রাণ বিলির সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র। সেই মতো দুর্গতরাও পুরভবনে এসে জমায়েত হন। কিন্তু তার মধ্যেই খবর যায় তৃণমূলের বিরোধী শিবিরে। প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকার ত্রাণ বিলিতে বাধা দেন। দুপক্ষের মধ্যে তপ্ত বাদানুবাদে শুরুই করা যায়নি ত্রাণ বিলির প্রক্রিয়া।
তার মধ্যেই মহকুমা এবং জেলা প্রশাসনে গন্ডগোলের খবর যায়। বালুরঘাট থেকে পুরসভায় যান জেলা ত্রাণ আধিকারিক। তিনি গিয়ে ত্রাণের ঘরে তালা দিয়ে দেন।
কিন্তু পুরসভার চেয়ারম্যান এবং দুর্গতরা মিলে তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। চলতে থাকে ধাক্কাধাক্কিও। খবর পেয়ে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার চেষ্টা করে। প্রায় দু’ঘণ্টা বিক্ষোভের পর ত্রাণ আধিকারিককে ঘেরাও মুক্ত করে উদ্ধার করেন পুলিশ কর্মী-অফিসাররা। কিন্তু তার পরও ত্রাণের ঘরের দরজা খোলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে ত্রাণ না পেয়ে ফিরে যান দুর্গতরা।
আরও পডু়ন: আইএসআই চর! ফোর্ট উইলিয়ামের তথ্য ফাঁস! বেনামি চিঠিতে আতঙ্কে খিদিরপুরের নামী স্কুলের শিক্ষকরা
পরে জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, ‘‘কাউন্সিলররা মহকুমা এবং জেলা প্রশাসনে ত্রাণ বিলি নিয়ে গন্ডগোলের খবর পাঠান। অভিযোগ ওঠাতেই আগামিকাল বুধবার মহকুমা শাসকের দফতর থেকে ত্রাণ বিলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
গঙ্গারামপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন অমলেন্দু সরকার। কিন্তু গত ১৬ জুলাই পদাধিকার বলে তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মণ্ডল। মঙ্গলবারের বিক্ষোভ এবং ত্রাণ বিলিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মূলত এই অমলেন্দু সরকার এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধেই। অমলেন্দুবাবু এ দিন বলেন, ‘‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়েছে। অধিকাংশ কাউন্সিলর তাঁর সঙ্গে নেই। তবু কাউকে না জানিয়ে জনগণের সমবেদনা কুড়োতে ত্রাণ বিলির উদ্যোগ নিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। এটা অনৈতিক। সেই কারণেই বাধা দেওয়া হয়েছে।’’
যদিও চেয়ারম্যান প্রশান্ত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘পুরসভা একটি স্বশাসিত সংস্থা। এখনও তিনি সেখানকার চেয়ারম্যান। তাই ত্রাণ বিলির অধিকার এবং ক্ষমতা তাঁর হাতেই রয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। ত্রাণের ঘরে তালা দেওয়াও বেআইনি। সেটা হওয়াতেই দুর্গত সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’ অন্য দিকে বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি শুভেন্দু সরকার বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। জেলাশাসক এটা করতে পারেন না।’’
আরও পড়ুন: খবর দিল ফেসবুক, পিকনিক গার্ডেনে যুবকের আত্মহত্যা রুখল কলকাতা পুলিশ
এই প্রশান্ত মণ্ডল দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের ভাই। বিপ্লব মিত্র কিছু দিন আগেই দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেই সময় প্রশান্ত মণ্ডলও দিল্লিতে গিয়েছিলেন। যদিও তিনি বিজেপিতে যোগ দেননি। যদিও ওই ঘটনার পর দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।
গঙ্গারামপুর পুরসভায় মোট আসন ১৮। সব ক’টিই তৃণমূলের দখলে। কিছু দিন আগেই অমলেন্দু সরকার-সহ ৯ জন কাউন্সিলর চেয়ারম্যান প্রশান্তর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। কিন্তু তার মধ্যে আবার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ৫ অগাস্ট তলবি সভা ডেকে বসেন। এই পরিস্থিতিতে অমলেন্দু সরকার ও তাঁর অনুগামীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট সেই ৫ তারিখের তলবি সভাকেই মান্যতা দিয়েছে।