নবগ্রামে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে ঘিরে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদে রেল-রাস্তা অবরোধ করে তাণ্ডব হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে গিয়ে মুর্শিদাবাদে ঘেরাওয়ের মুখে পড়লেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও সৌমিত্র খাঁ। মালদহে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন পরিদর্শনে যাওয়ার পথে দুই বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ও খগেন মুর্মুকে গ্রেফতারই করে নিল পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, যাঁরা ভাঙচুর করেছে, জাতীয় সম্পত্তি নষ্ট করে চলেছে, তাদের আজও ধরতে পারল না রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন, অথচ বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করতে ব্যস্ত।
সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে। বুধবার ওই সব এলাকা পরিদর্শনে যান এ রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বিজয়বর্গীয়র অভিযোগ, নবগ্রামের কাছে যেতেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে এক দল লোক এসে তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরে। সেই উত্তেজিত জনতার সঙ্গে সিআরপিএফ-এর ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলে আর যেতে পারেননি তাঁরা। বিজয়বর্গীয়র দাবি, ওখান থেকেই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করেছিলেন। তার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ প্রশাসন কিছুটা সক্রিয় হয়। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তাঁদের উদ্ধার করেন।
পরে ফেসবুক লাইভে কৈলাস বিজয়বর্গীয় অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে প্রায় সর্বত্রই রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে আমাদের অনেক নেতা-নেত্রীর বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের সুরক্ষা দিচ্ছে না। সেই জন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেই সব গ্রামীণ এলাকায় যাব। তাঁদের সঙ্গে দেখা করব, সাহায্য করব। কিন্তু পুরো পুলিশ প্রশাসন আমাদের আটকানোর জন্য তৎপর ছিল। আমাদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা ভেবেই দুঃখ হয় যে, এখানে কারও প্রাণের মূল্য নেই। পুলিশও ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক উপায়ে কেউ কোনও দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।’’
কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফেসবুক লাইভ।
এই ইসুতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জেরে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও ভালুকা স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছিল কয়েক দিন আগে। মঙ্গলবার ওই স্টেশন দু’টি পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ও মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু। তাঁদের দাবি, পরিদর্শনের জন্য পুলিশের অনুমতিও নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মালদহ শহর থেকে যাত্রা শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই শহরের সুকান্ত মোড়ে তাঁদের আটকে দেয় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, দুই সাংসদকে আটকানোর পরেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশ দুই সাংসদকে গ্রেফতার করে ইংরেজবাজার থানায় নিয়ে যায়। যদিও পরে জামিনে তাঁদের ছাড়া হয়। তবে কেউই হরিশ্চন্দ্রপুর বা ভালুকা যেতে পারেননি।
মালদহে নিশীথ প্রামাণিক ও খগেন মুর্মুকে আটকে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘এ রাজ্যে পুলিশ সম্পূর্ণ দলদাসে পরিণত হয়েছে। আমি এবং খগেন মুর্মু, দু’জনেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমরা যাচ্ছিলাম হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশন পরিদর্শনে। মাঝপথেই যে ভাবে চার দিক থেকে ঘিরে ধরে আমাদের আটকে দেওয়া হল এবং তার পরে গ্রেফতার করা হল, তার নিন্দার ভাষা নেই। আমাদের কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত আমাদের জামিন দিতে পুলিশ বাধ্য হয়েছে। কিন্তু হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে আমাদের পৌঁছতে দেওয়া হয়নি।’’