ঘরোয়া: জেলা সভাপতি হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়িতে বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক উদয়ন গুহ, চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ, প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়, জলিল আহমেদ প্রমুখ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
যে পার্থকে দূরে সরিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সেই পার্থকেই কাছে টেনে নিলেন মমতা। শুক্রবার বিকেলে কোচবিহারের তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ইস্তফার পর থেকেই জেলা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশের মুখে এমন কথা ঘুরছে। পার্থপ্রতিম রায় তৃণমূলের কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ। তৃণমূল রাজনীতিতে তিনি ও রবীন্দ্রনাথ কাকা-ভাইপো নামেও পরিচিত। উপনির্বাচনে জিতে আড়াই বছর সাংসদ ছিলেন পার্থ। কিন্তু এ বারে দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। তৃণমূল সূত্রে দাবি, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিরোধের জেরেই এ বারে টিকিট মেলেনি পার্থের। খানিকটা বিমর্ষ হয়ে পড়া পার্থকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁকে অন্য কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে। শুক্রবার দলের কোচবিহার জেলার কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। দৃশ্যতই অনেকটা চনমনে হয়ে ওঠেন পার্থ। দলেরই এক সময়ের দাপুটে যুব নেতা নিশীথ প্রামাণিক এখন বিজেপির সাংসদ। তাঁর সঙ্গে যুব সংগঠনের একটি বড় অংশ যোগ দিয়েছে বিজেপিতে। সেখান থেকে পার্থ কি পারবেন যুবদের ফের ফিরিয়ে আনতে?
পার্থ বলেন, “কারও প্রতি আমার কোনও অভিমান ছিল না। আমি দিদির অনুগত সৈনিক। যখন যে ভাবে আমাকে কাজ দেবেন, তাই করব। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।” সেই সঙ্গেই বলেন, “রবিকাকার সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। সবাই একসঙ্গে চলব। যুব সংগঠনের কেউই বিজেপিতে যায়নি। সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন।” রবীন্দ্রনাথ অবশ্য খুব বেশি কিছু বলতে চাননি। পার্থকে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে শুনে খুব শান্ত ভাবে রবীন্দ্রনাথ বলেন, “আমি শুনেছি। সবাই ভাল ভাবে করুক। দল আরও শক্তিশালী হোক। দলের সবার্থে আমি কাজ করে যাব।” কাকা-ভাইপোর লড়াই যে মিটে যায়নি, তা অবশ্য দেখা গিয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। পার্থপ্রতিমের অনুগামীদের উল্লাস এবং রবীন্দ্রনাথ অনুগামীদের ক্ষোভে সেটা ধরা পড়েছে।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিরোধের কথা জেনেও কেন পার্থকে দলের সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পরে নিয়ে আসা হল? দলীয় সূত্রেই তাঁর ব্যাখ্যা মিলেছে— আড়াই বছর আগে কোচবিহারের সাংসদ রেণুকা সিংহের অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে সাংসদ হন পার্থ। সে সময় তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা সবার মুখে মুখে ঘুরত। পার্থকে সাংসদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথই যে সব থেকে বেশি আওয়াজ তুলেছিলেন, তা প্রায় একবাক্যে স্বীকার করে নেন সবাই। সাংসদ হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে বলে দু’পক্ষের ঘনিষ্ঠরাই জানাচ্ছেন। সেই ফাটল চওড়া হয় গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে যুব বনাম মূলের মোড়কে। ফারাক এমন জায়গায় পৌঁছয় যে রবীন্দ্রনাথ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, তাঁকে যেন কেউ কাকা না ডাকেন।
এর মধ্যে যুব ও মূল তৃণমূলের লড়াইয়ে খুন-জখম নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে ওঠে। পরে দল নিশীথ প্রামাণিককে বহিষ্কার করে। সেই নিশীথ বিজেপিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি কোচবিহারের সাংসদ।
পার্থকে টিকিট দেয়নি দল। এর পিছনেও রবীন্দ্রনাথের কলকাঠি রয়েছে বলে সেই সময়েই দাবি করেছিলেন দলের অনেকে। হারের পরে দলের সেই অংশের দাবি, এই কারণেই যুবদের একটি অংশ তাঁদের থেকে সরে গিয়েছে। এই অবস্থায় পার্থকে দায়িত্ব দিয়ে আবার যুব সংগঠন শক্তিশালী করতে চাইছে দল।
বিজেপির কোচবিহার জেলার সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। তৃণমূলের কাজে মানুষ তিতিবিরক্ত। তাই তৃণমূলে কী পরিবর্তন হল, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না।”