Doctors

Transfer: শিক্ষক-ডাক্তার বদলিতে নীতি বদলাচ্ছে রাজ্য

ঠিক কী কী বদল প্রয়োজন, তা চূড়ান্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, নির্দেশিকা জারির ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে ওই দফতরে প্রস্তাব জমা দিতে হবে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৬
Share:

প্রতীকি ছবি

ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের বদলি নীতি নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ দীর্ঘকালের। এমনকি তার জেরে একাধিক শিক্ষক-চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। এ বার সেই বদলি নীতি বদলেরই সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। ঠিক কী কী বদল প্রয়োজন, তা চূড়ান্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, নির্দেশিকা জারির ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে ওই দফতরে প্রস্তাব জমা দিতে হবে।

Advertisement

১৭ নভেম্বর সেই কমিটির নির্দেশিকা জারি করেছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সদস্য হয়েছেন ইনস্টিটিউট অব হেল্‌থ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের অধিকর্তা ইন্দ্রনীল বিশ্বাস ও রাজ্যের কোভিডের নোডাল অফিসার তথা এসএসকেএমের গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গোপালকৃষ্ণ ঢালি। ওই কমিটির প্রস্তাব প্রথমে স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়বে। বিচার-বিবেচনার পরে সেখান থেকে সেটি পাঠানো হবে নবান্নে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হওয়ার পরেই চিকিৎসক বদলিতে নতুন নীতি বলবৎ হবে।

বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে সহকারী শিক্ষক-চিকিৎসক থেকে বিভাগীয় প্রধান পর্যন্ত সব পদেই নিয়োগ ও বদলি হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের মাধ্যমে। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ, দিনের পর দিন বদলি ও পোস্টিংয়ে স্বজনপোষণ চলছিল। ‘ডিটেলমেন্ট অর্ডার’ করে অনেক চিকিৎসক পছন্দের জায়গায় থেকে যাচ্ছেন। অথচ সার্ভিস বুকে তার উল্লেখ থাকে না। ধরা যাক, কারও বদলি হল উত্তরবঙ্গে। কিন্তু কিছু অসুবিধার কারণ দেখিয়ে ‘ডিটেলমেন্ট অর্ডার’ করিয়ে সেই চিকিৎসক কলকাতার হাসপাতালে থেকে গেলেন। অথচ সার্ভিস বুকে লেখা থাকছে, তাঁর পোস্টিং উত্তরবঙ্গে। এমনকি বেতন হচ্ছে সেখান থেকেই।

Advertisement

খুঁটির জোরে বদলি এবং বদলিতে বৈষম্যের অভিযোগ সম্প্রতি আবার প্রকাশ্যে এসেছিল সহকারী শিক্ষক-চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্যের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে। প্রায় আট বছর মেদিনীপুরে কাজ করার পরে অটিজমে আক্রান্ত মেয়ের জন্য বাড়ির কাছাকাছি বদলি চেয়ে আবেদন করলেও ডায়মন্ড হারবারে বদলি করা হয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের ওই চিকিৎসককে। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, ‘‘বদলি নীতি তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু তা রূপায়িত হবে তো? কারণ, হেল্‌থ সার্ভিস বা স্বাস্থ্য প্রশাসনিক সার্ভিসে বদলি নীতি থাকলেও তা কতটা মানা হয় তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এখন আনুগত্যই বদলির নীতি হয়ে আছে।’’

মানসবাবু জানান, অতীতে সুনির্দিষ্ট লিখিত নীতি না-থাকলেও একটা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী বদলি হত। কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও এক জন চিকিৎসক নির্দিষ্ট সময়ের পরে নিজের জেলায় ফিরতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘‘তাই শুধু নীতি তৈরি করলে হবে না, সেই নীতি রূপায়ণে চাই একশো শতাংশ স্বচ্ছতা।’’ স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, ১৯৯৬ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসকে জ়োন-১, ২, ৩, ৪— এই ভাবে বিভক্ত করা ছিল। একের মধ্যে কলকাতা, দুইয়ের মধ্যে বর্ধমান, তিনে বাঁকুড়া ও চার নম্বর জ়োনে উত্তরবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলি ছিল। নিয়ম ছিল, সমগ্র কর্মজীবনে অন্তত ৮-১০ বছর অন্য জেলায় কাটাতে হবে। তার পরে নিজের জেলায় পোস্টিং মিলবে। আগে মেডিক্যাল কলেজ ছিল সাতটি। এখন বেড়ে হয়েছে ২১টি। তাই নতুন নীতিতে জ়োন পরিবর্তন, বদলির পরে দু’মাসের বেশি ‘ডিটেলমেন্ট অর্ডার’ কার্যকর না-হওয়ার মতো বিষয় ঠাঁই পেতে পারে বলে স্বাস্থ্য সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement