—ফাইল চিত্র।
শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জী) তৈরি হবে সব রাজ্যে— বার বার হুঙ্কারের সুরে জানাচ্ছে দেশের শাসক দল। সরকারের শীর্ষকর্তারাও কোনও রাখঢাক না করে বলছেন, এনআরসি হবেই। কিন্তু সে লাইনের ঠিক উল্টো দিকে হাঁটলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি চন্দ্রকুমার বসু। ভারতকে যাঁরা নিজেদের ঘর বলে মেনে নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে ভারতীয়— এই নীতির উপরে ভিত্তি করেই এনআরসি তৈরি করতে হবে, টুইট করেছেন তিনি। রাজ্য বিজেপির অন্দরে তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
শনিবার রাত ১১টা ২৫ নাগাদ টুইট করেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি চন্দ্রকুমার বসু। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার সে টুইটে যা লেখেন, তার সারকথা হল— এ দেশে যদি এনআরসি তৈরি করতে হয়, তা হলে যাঁরা ভারতকে নিজেদের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
চন্দ্র বসুর এই তত্ত্ব কিন্তু বিজেপির বা মোদী সরকারের এনআরসি তত্ত্বের সঙ্গে মিলছে না। দলের এক রাজ্য স্তরের নেতার কথায়, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলি ছেড়ে যাঁরা ভারতে ঢুকেছেন বা ঢুকছেন, তাঁরাও ভারতকে নিজেদের দেশ হিসেবেই বেছে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। তা হলে কি তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দিতে হবে?’’
আরও পড়ুন: কে আগে বলবেন, মোদী না ট্রাম্প? ‘হাউডি মোদী’ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে হিউস্টনে
নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ইতিমধ্যেই সংসদে নিয়ে এসেছে মোদী সরকার। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিসম্তান বা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসা লোকজনের মধ্যে যাঁরা ওই সব দেশে ধর্মীয় ভাবে সংখ্যালঘু ছিলেন, তাঁদেরকে ভারত শরণার্থী হিসেবে ধরবে এবং নাগরিকত্ব দিয়ে দেবে। কিন্তু ওই সব দেশে যাঁরা সংখ্যালঘু নন অথচ এ দেশে ঢুকেছেন, তাঁদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে না। তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হবে।
বিজেপির তথা সরকারের এই নীতির সঙ্গে চন্দ্র বসুর তত্ত্বের ফারাক রয়েছে। আর সে তত্ত্ব তিনি সামনে এনেছেন এমন একটা সময়ে, যখন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত পাঁচ দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। শেষ দু’দিনে ভাগবত রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে বসেন। তার মাঝেই চন্দ্র বসুর বেসুরো টুইট। এনআরসি-র মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও যদি বিজেপির অন্দরে এই রকম মতভেদ থাকে, তা হলে সমন্বয়ের চেহারাটা নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেই যায়।
আরও পড়ুন: সারদার পর এ বার রোজভ্যালি কাণ্ডেও সিবিআইয়ের নোটিস রাজীবকে, ফের স্ত্রীর সঙ্গে কথা
প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্য বিজেপি অনুমোদন করেনি চন্দ্র বসুর মতামতকে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘ওটা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। ওঁর উচিত দলের আদর্শ অনুযায়ী চলা।’’
তবে চন্দ্র বসু নিজে বিষয়টি নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ফোন ধরেননি। এসএমএসে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি জবাব দেননি।