Pandua

এ বার রেকর্ডিং স্টুডিয়োয় পা সেই চাঁদমণির

গত মাসেই পান্ডুয়া খন্যানের বড় মুন্টি গ্রামের আদিবাসী কিশোরী চাঁদমণি হেমব্রমের গাওয়া দু’টি গান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৬:২৯
Share:

রেকর্ডিংয়ে চাঁদমণি। —নিজস্ব িচত্র

সোশ্যাল মিডিয়ার পরে রেকর্ডিং স্টুডিয়ো। আর এক কদম এগোল চাঁদমণি।

Advertisement

গত মাসেই পান্ডুয়া খন্যানের বড় মুন্টি গ্রামের আদিবাসী কিশোরী চাঁদমণি হেমব্রমের গাওয়া দু’টি গান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। একটি রবীন্দ্রনাথের ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’, অন্যটি সঙ্গীতশিল্পী নেহা কক্করের গাওয়া ‘ও হমসফর’। গান গাওয়ার প্রথাগত কোনও তালিম না-থাকা সত্ত্বেও চাঁদমণির গান গাওয়ার অনায়াস ভঙ্গি খুব পছন্দ হয় সকলের। নেট-দুনিয়ার নাগরিকেরা প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মেয়েটিকে। সেই মেয়েই গত শুক্রবার পঞ্জাবের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ও কম্পোজার আয়শান আদ্রির নির্দেশে বর্ধমানের একটি স্টুডিয়োতে গিয়ে একটি হিন্দি গান রেকর্ড করল।

প্রান্তিক পরিবারের মেয়েটি বলে, ‘‘আমার খুব ভাল লাগছে। খুব আনন্দ হচ্ছে। সারাজীবন গান নিয়েই থাকতে চাই। ওটাই আমার একমাত্র স্বপ্ন।’’

Advertisement

স্বপ্ন পূরণের পথে চাঁদমণির একমাত্র প্রতিবন্ধকতা অনটন। দশ বছর আগে তার বাবা মারা যান। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেন মা মালতি। মায়ের সঙ্গে মাঠে ধান রোয়া, ধান কাটা-সহ সব কাজে সঙ্গী দশম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদমণিও। তিন বোনের মধ্যে সে-ই বড়। মামারবাড়ি পাশেই।

মামার মোবাইলেই গান শুনে চর্চা চলে চাঁদমণির। তার নিজের ঘরে কোনও মোবাইল নেই। তার সেই গান শুনেই গত মাসে ত্রাণ বিলি করতে আসা শ্যাম হাঁসদা নামে এক আদিবাসী যুবক মোবাইলে রেকর্ড করে তা ফেসবুক, ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়। তারপরেই তা ‘ভাইরাল’।

সে কথা শুনে চাঁদমণি আনন্দে ভেসেছে। কিন্তু আমপানের ধাক্কায় সেই আনন্দ নিমেষে হারায়। ঝড়ে বিদ্যুৎহীন মাটির ঘরের চাল ভেঙে যায়। বৃষ্টির জল ঢোকে অঝোরে। মামা ও পড়শিদের সাহায্যে ফের মাথা গোঁজা ব্যবস্থা করে তারা। তারপরে শুক্রবার হঠাৎ আলোর ঝলকানি!

পঞ্জাব থেকে ফোনটা এসেছিল শ্যামের কাছেই। তিনিই চাঁদমণিকে নিয়ে বর্ধমানের স্টুডিয়োতে যান। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানেও সবাই ওর গানের খুব প্রশংসা করেছেন। রেকর্ডিংটা আমি পঞ্জাবে পাঠিয়েও দিয়েছি। আয়শান আদ্রি ওই গানটা নিয়ে কী করবেন, তা অবশ্য জানি না।’’

মেয়ের প্রতিভা আছে। কিন্তু প্রতিভার বিকাশে তিনি কিছুই করতে পারছেন না বলে মালতির আক্ষেপ যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘একটা মোবাইল কিনতে পারছি না। এই একটাই বায়না রয়েছে মেয়ের। তা হলে ও আরও গান শুনতে পারত। দু’বেলা ঠিকমতো খাবারই জোটে না। কী ভাবে যে ওর বায়না মেটাব!’’

পাকা ঘর নেই। অর্থ নেই। মোবাইল নেই। চাঁদমণির আছে শুধু একরাশ স্বপ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement