প্রথমে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন। এর পরে এক মাস ধরে রাজ্য জুড়ে সই সংগ্রহ অভিযান। সব শেষে কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করার দাবিতে বিক্ষোভ-কর্মসূচি। এ রাজ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করার দাবিকে সামনে রেখে এই কৌশলই নিচ্ছে বিজেপির স্বাস্থ্য পরিষেবা সেল।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের সদস্যেরা বুধবার বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের আহ্বায়ক দেবাদিত্য চাকী।
গত জানুয়ারিতে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রকল্পের উপভোক্তাদের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি সংবলিত ‘এনটাইটেলমেন্ট লেটার’ পৌঁছতেই এই সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের প্রচার ময়দানে মোদী-মমতা দ্বৈরথের অন্যতম বিষয় ছিল আয়ুষ্মান ভারত। বাংলায় ১৮টি আসন জেতার পরে এ বার সেই প্রকল্পকে সামনে রেখেই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিজেদের দাপট জাহির করতে চাইছে বিজেপি।
স্বাস্থ্য সেলের আহ্বায়ক এ দিনের বৈঠকের পরে জানান, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পে কী কী সুবিধা রয়েছে, রাজ্য ও জেলা স্তরে সাধারণ মানুষের কাছে সেই বিষয়ে প্রচার করা হবে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথীর তুলনায় আয়ুষ্মান যে আরও ভাল প্রকল্প, তা বোঝাতে বিলি করা হবে প্রচারপত্র। দেবাদিত্যের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের উপরে চাপ তৈরি করতে এক মাস ধরে সই সংগ্রহ অভিযান চলবে। পাঁচ-দশ লক্ষ সই সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।’’ তাতেও কাজ না-হলে কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করার দাবিতে বিক্ষোভ-কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে।
বিজেপির স্বাস্থ্য সেলের দাবি, তাদের এই অবস্থানে বেসরকারি হাসপাতালগুলির একাংশের নৈতিক সমর্থন আছে। যে-সব বেসরকারি হাসপাতাল এখন স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় রয়েছে, তাদের মধ্যে রাজ্যের বিমা প্রকল্পে আইসিইউ, এইচডিইউ-সহ বিভিন্ন পরিষেবার জন্য ধার্য মূল্য নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বৈঠকও হয়েছে। সেই অসন্তোষকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপির স্বাস্থ্য সেল।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অবশ্য স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে তাদের বক্তব্যকে ‘অসন্তোষ’ বলে মানতে রাজি নয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সম্পাদক রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘আরও বেশি বেসরকারি হাসপাতাল যাতে রাজ্যের প্রকল্পে যুক্ত হতে পারে, সেই জন্যই গ্রেড বাড়ানোর কথা বলছি আমরা। তাতে উন্নত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। এর মধ্যে অন্য কোনও বিষয় নেই।’’ স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলি লিখিত ভাবে বক্তব্য জানালে খোলা মনে আলোচনার দরজা খোলা আছে।