আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যসচিবের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যে পিছু হটার প্রশ্ন নেই, ফের তা বুঝিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে ফের কড়া চিঠি ধরিয়েছে তারা। তাতে আলাপনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে উপস্থিত না থাকা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। চিঠি হাতে পাওয়ার পর এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে আলাপনকে। তার মধ্যে জবাব না পেলে, আলাপনকে না জানিয়েই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে কেন্দ্র পিছপা হবে না বলে চিঠিতে সাফ জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রকের তরফে সোমবার আলাপনকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, লিখিত ভাবে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন আলাপন। অথবা আত্মপক্ষ সমর্থনে সশরীরে উপস্থিত হয়েও নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন তিনি। অন্যথায় সর্বভারতীয় প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার (অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস) ৮ এবং ৬ নম্বর বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে,যার আওতায় অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন তিনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ মানছেন তিনি, নাকি অস্বীকার করছেন, তা জানাতেই হবে তাঁকে। যে ৬ নম্বর বিধির উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে, সেই অনুযায়ী, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে কোনও আমলার বিরুদ্ধ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হলে, মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার-পরিজনরা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনে আলাপন যদি লিখিত জবাব না দেন, সশরীরে যদি তদন্তকারীদের সামনে উপস্থিতও না হন, সে ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাভঙ্গ নিয়ে আলাদা করে তদন্ত হবে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
ইয়াস পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে আলাপন এবং মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রের অভিযোগ, কলাইকুন্ডায় পৌঁছে নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যের আমলাদের জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল। মুখ্যসচিবকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বৈঠকে যোগ দিতে চান কি না। তার পরে মুখ্যসচিব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক কক্ষে ঢুকে পর ক্ষণেই বেরিয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। তিনি ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনায় বসেছিলেন। আলাপন সেখানে না থেকে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করেছেন বলে সেই সময় অভিযোগ ওঠে আলাপনের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার পর আলাপনকে দিল্লিতে তলব করা হয়। কিন্তু সেখানে না গিয়ে তাঁর কর্মজীবনের শেষদিনে মুখ্যসচিবের পদ থেকে অবসর নেন আলাপন। তার পরেই তাঁকে নিজের উপদেষ্টা করে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানেই বিষয়টি মিটে গিয়েছে বলে সেই সময় ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এর পরেই বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় আলাপনকে শোকজ করে কেন্দ্র। জবাব দেওয়ার জন্য আলাপনকে তিন দিন সময় দেওয়া হয় সেই সময়। সেই মতো গত ৩ জুন লিখিত জবাব দিল্লিতে পাঠিয়ে দেন আলাপন। তাতে তিনি জানান, মুখ্যসচিব হিসেবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করাই তাঁর প্রধান কর্তব্য ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। তার পর প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। সোমবার ফের আলাপনকে কড়া চিঠি ধরাল কেন্দ্র।