Sadhvi Niranjan Jyoti

১০০ দিনের টাকা দিতে তৈরি কেন্দ্র, কলকাতায় এসে মোদী-মমতা বৈঠকের ভবিষ্যৎও জানালেন মন্ত্রী

রাজ্যের বকেয়া নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি অভিযানের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও বরফ গলেছে কী?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৫
Share:

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে গত বছরের ৩ অক্টোবর প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন দেখা করেননি বলে অভিযোগ তুলে কলকাতাতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালান অভিষেক। এর মাস আড়াই পরে ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও ছিলেন অভিষেক। নতুন বছরের তৃতীয় দিনে কলকাতায় গত বছরের সেই দু’দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন নিরঞ্জন। মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় এসে বুধবার কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান তিনি। বিমানবন্দর আর কালীঘাট দু’জায়গাতেই দিল্লির ঘটনা টেনে আনেন নিরঞ্জন। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

Advertisement

অভিষেকের দিল্লি অভিযান কিংবা মমতার মোদীর সঙ্গে বৈঠকের মূল বিষয়ই ছিল কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ বাংলার প্রাপ্য টাকা আকটে থাকা নিয়ে। যার বেশিটাই আটকে রেখেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তবে মন্ত্রী কলকাতায় এসে দাবি করলেন, ‘‘বাংলাকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দিতে তৈরি কেন্দ্র। হিসাব দিলেই টাকা পাওয়া যাবে।’’ এই প্রসঙ্গে মোদী-মমতা বৈঠকের কথাও টেনেছেন নিরঞ্জন। প্রসঙ্গত, ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে আধিকারিকেরা মিলে বিষয়টা মিটিয়ে নেবেন। এই প্রসঙ্গে নিরঞ্জন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কেন্দ্রের তরফে দু’জন আধিকারিককে নিযুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যের তরফেও দু’জন আধিকারিক ঠিক হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কেন যেখানে যেখানে গোলমাল হয়েছে তা ঠিক করে মমতাদিদি এই সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তা জানা নেই।’’ এখানেই না থেমে নিরঞ্জন বলেন, ‘‘হয় তো দিদি ফেঁসে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন।’’ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নামবদল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নিরঞ্জন।

লোকসভা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষ যাতে ১০০ দিনের কাজ বাবদ টাকা পেয়ে যান এমনটা চাইছেন বিজেপির একাংশও। কিন্তু কেন্দ্র কী চাইছে? গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজও বলছি ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে। যাঁরা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই আমরা টাকা দিতে তৈরি। কিন্তু জানি না কেন মমতাদিদি করতে চাইছেন না। লোকসান তো বাংলার মানুষের হচ্ছে, এখানকার শ্রমিকদের হচ্ছে।’’

Advertisement

তবে নিরঞ্জন এর থেকেও বেশি আক্রমণাত্মক হন কালীঘাটে। একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় দাঁড়িয়ে টেনে আনেন অভিষেকের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গ। বুধবার সকালে কালীঘাটে পুজো দিতে গিয়েছিলেন নিরঞ্জন। সেখানে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেন, সে দিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে দীর্ঘ ক্ষণ বসেছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। মন্ত্রী বলেন, “প্রথমে ওরা বলেছিল, ৫ জন দেখা করবে। তার পর বলল ১০ জন দেখা করবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন বলেছিলেন। আমি রাজি হয়েছিলাম দেখা করতে। তার পর ওরা বলল, প্রতিনিধি নয়, জনতার সঙ্গে দেখা করতে হবে।”

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমার খুব কষ্ট হয়, আমি নিজের কাজ ছেড়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম বাংলার মানুষের ভালর জন্য। তাঁর দাবি, বাংলার মানুষের কথা ভাবা নয়, এদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ধর্না দেওয়া। তিনি আরও বলেন, “আমরা কারও টাকা বন্ধ করিনি। যদি টাকা বন্ধ করাই লক্ষ্য হত, তা হলে অন্যান্য প্রকল্পের সব টাকা বন্ধ করে দেওয়া হত।”

এর পরেই নিরঞ্জনকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের একাধিক নেতা। বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্র থেকে রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা পাল্টা আক্রমণ করেছেন। বিরবাহা বলেন, ‘‘সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি মিথ্যা কথা বলছেন। আমিও সে দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাধ্বীজির অফিসে গিয়েছিলাম। সে দিন চার ঘণ্টা ধরে ওঁর নাটক দেখেছি। পারলে আমাদের সামনাসামনি বসে যা বলতে চাইছেন সেগুলি উনি বলুন।’’ প্রসঙ্গত, বুধবার অপেক্ষার যে দাবি নিরঞ্জন করেছেন তা অতীতেও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে। দিল্লিকাণ্ডের পরে কলকাতায় এসে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন নিরঞ্জন। সেই সময়েও মন্ত্রীর দাবিকে ‘অসত্য’ বলেছিল তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement