বিশ্বভারতীতে কুষ্ঠে বৈষম্য আইন, সংশোধনের নির্দেশ

২০১৭-১৮ সালে দেশে নতুন করে ১ লক্ষ ২৬ হাজার কুষ্ঠরোগীর খোঁজ মিলেছে। এখনও বিশ্বের মোট কুষ্ঠরোগীর ৬৬% ভারতে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২২
Share:

বিশ্বভারতী।—ফাইল চিত্র।

বিশ্বভারতীর আইনে কুষ্ঠরোগীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ধারা আগামী বছরের মধ্যে সংশোধন করতে আইন ও সামাজিক ন্যায় মন্ত্রককে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।

Advertisement

২০১৭-১৮ সালে দেশে নতুন করে ১ লক্ষ ২৬ হাজার কুষ্ঠরোগীর খোঁজ মিলেছে। এখনও বিশ্বের মোট কুষ্ঠরোগীর ৬৬% ভারতে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক কুষ্ঠরোগীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ বা সংশোধনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কারণ, মন্ত্রকের মতে, কুষ্ঠরোগীদের অচ্ছুত করে রাখলে তাঁরা চিকিৎসা করাতে দ্বিধা করবেন। মন্ত্রক সূত্রের খবর, মন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এলিমিনেশন অফ ডিসক্রিমিনেশন এগেনস্ট পার্সন অ্যাফেকটেড বাই লেপ্রসি বিল’–এর খসড়া তৈরি এবং আইন কমিশনের ২৫৬ নম্বর রিপোর্টে তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একে দ্রুত আইনে পরিণত করা হবে।

দিল্লি থেকে জাতীয় কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অনিল কুমার ফোনে বলেন, ‘‘কুষ্ঠ এখন চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। তবু তিনটি কেন্দ্রীয় আইন, ১০৫টি রাজ্য আইন রোগীদের প্রতি বৈষম্যমূলক। ২০২০ সালের মধ্যে সেগুলি সংশোধনে আইন মন্ত্রককে অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।’’

Advertisement

অনিলের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতী অ্যাক্ট- ১৯৫১’-এ বলা হয়েছে, কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সেখানে অধ্যাপক বা অ্যাকাডেমিক স্টাফের পদে থাকতে পারবেন না। যদি থাকেন, তা হলে শুধু এই রোগের কারণে তাঁকে পত্রপাঠ বরখাস্ত করা যাবে। সে কালের প্রেক্ষিতে হয়তো আইনটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন এমন আইন ভাবা যায় না।’’ বিশ্বভারতীর তরফে জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘আইন থাকলেও এ যাবৎ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যেখানে কুষ্ঠরোগের কারণে কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা কেউ চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ আলোচনা করবেন।’’

বাকি দু’টি বৈষম্যমূলক কেন্দ্রীয় আইনের একটি দিল্লি মেট্রো, অন্যটি বেঙ্গালুরু মেট্রো সংক্রান্ত। অনিল বলেন, ‘‘মেট্রোগুলি নতুন হলেও দু’টিতেই আইন রয়েছে, দৈহিক বিকৃতিযুক্ত কুষ্ঠরোগীকে যাতায়াতের সময় চিকিৎসকের দেওয়া রোগমুক্তির সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে।’’

বৈষম্যমূলক আইনগুলির মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ১৯৪৩ সালের বঙ্গ ভবঘুরে আইনও। অনিলের কথায়, ‘‘ওই আইনে বলা হয়েছে, ভবঘুরে-হোমে কুষ্ঠরোগী এলে আলাদা রাখতে হবে।’’ রাজ্য সরকারের কুষ্ঠ নিবারণী কর্মসূচির উপদেষ্টা প্রসূন মিত্র বলেন, গত বছরও রাজ্যে ৮১৮৫টি নতুন ‘কেস’ মিলেছে। কিন্তু রোগীদের প্রতি বৈষম্য দূর না-হলে কুষ্ঠ নির্মূল হবে না।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর (কুষ্ঠ) স্বপনকুমার ঝারিয়াতের বক্তব্য, ‘‘যে রোগীর চিকিৎসা হয়নি, একমাত্র তাঁর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও ১ শতাংশ। যাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুূব কম, তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। তবে রোগী এক ডোজ ওষুধ পেলেই রোগ ছড়ায় না। সর্দি-কাশি, চিকেন পক্স অনেক বেশি ছোঁয়াচে। ওই রোগীদের কি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement