প্রতীকী ছবি।
জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদ কি বাড়বে! জোর জল্পনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
আগামী আর্থিক বছরের (২০২২-২৩) বাজেটে নতুন কোনও প্রকল্পের ‘বোঝা’ না নিয়ে আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে রাজ্য সরকার। চালু কল্যাণ প্রকল্পগুলির উপর জোর থাকলেও তাতে উপভোক্তার সংখ্যাবৃদ্ধির সম্ভাবনা মেনে নিচ্ছে রাজ্য। ফলে খরচ হবেই এবং তার সংস্থান বাজেটে করে রেখেছে সরকার। কিন্তু রাজ্যের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস জিএসটি থেকে কর সংগ্রহ কাঙ্খিত না হলে সমস্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে। এর উপর জিএসটির ক্ষতিপূরণের নীতির মেয়াদ না বাড়লে সেই সমস্যা আরও প্রবল হওয়ার সম্ভাবনা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এর মধ্যে পিছিয়ে যাওয়া জিএসটি-র মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক এখনও না হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শীর্ষকর্তারা।
প্রশাসনের দাবি, কথা ছিল, জিএসটি-র আয় কাঙ্খিত না হলে পাঁচ বছর ধরে রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্র। যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মেয়াদ বাড়বে কি না, তার কোনও উচ্চবাচ্য এখনও নেই কেন্দ্রের দিক থেকে। অর্থ-কর্তারা জানাচ্ছেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর লখনউতে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছিল। ২০ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে হয় জিএসটি-র মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক। ওই বৈঠকে কিছু জরুরি পণ্যের উপর কর কাঠামো সংক্রান্ত ‘ফিটমেন্ট কমিটি’-র রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ২৭ নভেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রক বৈঠক করেছিল। ৩১ ডিসেম্বর দিল্লিতেই জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক হয়। রাজ্যের দাবি, গত ২৭ নভেম্বর পিছিয়ে যাওয়া বৈঠকটি ডাকা হয়নি এখনও পর্যন্ত। তাই জল্পনা।
রাজ্যের অর্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, অতীতে প্রতিটি বৈঠকেই জিএসটি নিয়ে রাজ্য নিজের অবস্থান তুলে ধরেছিল। দাবি করেছিল, বাড়ানো হোক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মেয়াদ। কারণ, মাঝে দু’-তিন বছর কোভিডের ধাক্কায় বেসামাল হয়েছে আর্থিক পরিস্থিতি। প্রায় সব ধরনের গতিবিধিতে লাগাম থাকার কারণে কর সংগ্রহ ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছিল। তা কাটিয়ে উঠতে গেলে ক্ষতিপূরণের মেয়াদ আরও কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে রাজ্য।
অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বারংবার আমরা অনুরোধ করেছি মেয়াদবৃদ্ধির জন্য। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিও দিয়েছেন। কোনও কিছুতেই কেন্দ্র কর্ণপাত করছে না। জুন মাস এগিয়ে আসছে। এখনই ইতিবাচক পদক্ষেপ করা না হলে রাজ্যগুলোর উপর চাপ আরও বাড়বে।”
রাজ্যের অভিযোগ, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে করের কেন্দ্রীয় ভাগ (ডেভোলিউশন) বাবদ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সেই পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে জিএসটি বাবদ এখনও প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে পায় রাজ্য। উল্টে সুরক্ষার যুক্তিতে ৬৪২৫ কোটি টাকা ঋণ করার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। চন্দ্রিমার কথায়, “রাজ্যগুলির আর্থিক পরিস্থিতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি। তাই রাজ্যগুলিকে চাপে ফেললে দেশের অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধি কী ভাবে হবে! সুবিধা একটা শ্রেণির জন্য হওয়া উচিত নয়। প্রত্যেকের কথা ভাবা দরকার।”
বাজেট-দাবি অনুযায়ী, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে রাজ্যের আনুমানিক জিএসটি আদায়ের পরিমান ছিল প্রায় ৩২,৯৮১ কোটি টাকা। কিন্তু ওই বছরের সংশোধিত বাজেটে দেখা যাচ্ছে, আদায় হয়েছে প্রায় ৩২,৯২০ কোটি। আগামী বছর ৩৬,১১৪ কোটি টাকা আদায়ের আশা করছে
রাজ্য। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় জিএসটি-র যে অংশ রাজ্যের পাওয়ার কথা,
গত বছরের অনুমানের থেকে সংশোধিত বাজেটে প্রায় ১
হাজার কোটি টাকা বেশি পাওয়া গিয়েছে। আগামী বছর এই খাতে প্রায় ২০,১৭২ কোটি টাকা ধরে রাখতে চাইছে রাজ্য।
সব মিলিয়ে রাজ্যের আশা, আগামী অর্থ বর্ষে কেন্দ্রীয় করের ভাগ এবং অনুদান বাবদ প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকা আসবে। কিন্তু অর্থ-কর্তাদের আশঙ্কা, তার থেকে কম টাকা এলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
তবে অর্থ মন্ত্রক সম্প্রতি টুইট করে জানিয়েছে, এ রাজ্যের গ্রামীণ স্থানীয় প্রশাসনগুলিকে ২০২১-২২ আর্থিক বছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত ২২৬৫.১১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সব রাজ্য মেলালে সেই অর্থ প্রায় ৩১,৭৬৫ কোটি টাকা।