প্রস্তাবিত বন্দরে ২০ মিটারের নাব্যতা থাকায় সব চেয়ে বড় আকারের জাহাজ বা কেপসাইজ ভেসেল চলাচলে কোনও সমস্যা থাকবে না। প্রতীকী ছবি।
উদ্দেশ্য প্রধানত দু’টি। প্রথমত, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পণ্য পাঠাতে বা নামাতে কলম্বো, সিঙ্গাপুরের মতো বিদেশি বন্দর ব্যবহারের খরচ বাঁচানো। দ্বিতীয়ত, বহির্বাণিজ্যে নিজেদের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দিয়ে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুবিধা আদায়। এই জোড়া লক্ষ্যে আন্দামানের দক্ষিণে গ্রেট নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন গালাথিয়া খাঁড়ির কাছে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য আগ্রহপত্র আহ্বান করছে জাহাজ মন্ত্রক। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প চারটি পর্যায়ে রূপায়ণ করার কথা। তার মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম পর্বের নির্মাণ ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে।
অবস্থানগত ভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথের মাত্র ৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে থাকা ওই দ্বীপপুঞ্জের প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সেখান থেকে ছোট জাহাজের পণ্য সব চেয়ে বড় আকারের কেপসাইজ ভেসেলে বোঝাই করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা তো মিলবেই। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে বাইরে থেকে আসা পণ্য ওই বন্দরে খালাস করে ছোট জাহাজে বোঝাই করার সুবিধাও। এত দিন ওই কাজ করার জন্য কলম্বো ও সিঙ্গাপুরের মতো বন্দরে যেতে হত। তাতে বিদেশি মুদ্রা খরচ হত বিপুল পরিমাণে। গালাথিয়া খাঁড়ির কাছে বন্দর গড়ে উঠলে সেই অর্থ সাশ্রয় তো হবেই, কৌশলগত ও অবস্থানগত কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও অনেক সুবিধা হবে ভারতের। বন্দরের কাজ সম্পূর্ণ হলে বছরে ১৬ মিলিয়ন কন্টেনার পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করা সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন জাহাজ মন্ত্রকের কর্তারা। প্রথম পর্বের কাজ শেষ হলে প্রায় চার মিলিয়ন কন্টেনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত বন্দরে ২০ মিটারের নাব্যতা থাকায় সব চেয়ে বড় আকারের জাহাজ বা কেপসাইজ ভেসেল চলাচলে কোনও সমস্যা থাকবে না। জাহাজ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ৩০ থেকে ৫০ বছরের লিজ়ে জমি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ওই বন্দর তৈরি করার কথা ভাবা হয়েছে।
প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরির অঙ্গ হিসেবে দু’টি জলবিভাজিকা, ৪০০ মিটার প্রশস্ত জাহাজ চলাচলের উপযোগী বিশেষ চ্যানেল ছাড়াও সাতটি বার্থ তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। তরল পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য দু’টি পৃথক বার্থ তৈরি করার কথা। এ ছাড়াও বন্দর এলাকায় উপনগরী, বিমানবন্দর, সড়ক-সহ অন্যান্য পারিকঠামো তৈরির পরিকল্পনা আছে।
জাহাজ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগ্রহপত্র আহ্বানের পরে যে-সব সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করবে, তাদের মধ্যে যোগ্যদের বেছে নিয়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমুদ্রবন্দরের কাজ শুরু করার জন্য বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে।