Hari Krishna Dwivedi

শুভেন্দুর আপত্তি উড়িয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণের মেয়াদ ছ’মাস বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার, হস্তক্ষেপ মোদীর

দ্বিবেদীর মেয়াদ না-বাড়ানোর জন্য শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমলাদের মেয়াদবৃদ্ধির বিষয়টি কেন্দ্রের ‘পার্সোনেল’ মন্ত্রকের অধীন। সেটি অমিতের অধীন দফতর নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ১২:২০
Share:

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র ।

মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবারই তাঁর কর্মজীবনের শেষদিন ছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেয়াদবৃদ্ধি সংক্রান্ত চিঠি না-আসায় প্রশাসনিক মহল খানিকটা উদ্বেগে ছিল। কিন্তু তার সঙ্গেই আশাবাদীও ছিল যে, শুক্রবার দিন শেষের আগেই ওই সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র এসে যাবে। বাস্তবেও তেমনই ঘটেছে। দ্বিবেদীর মেয়াদ বেড়ে যাওয়ার ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য প্রশাসনে কোনও রদবদল প্রয়োজন হচ্ছে না। সেদিক দিয়ে আশ্বস্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কারণ, প্রশাসনে দ্বিবেদী তাঁর ‘আস্থাভাজন’ বলেই পরিচিত।

Advertisement

মুখ্যসচিব পদে তাঁর মেয়াদবৃদ্ধি হবে কি না, তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন দ্বিবেদীও। গত কয়েকদিন তিনি সে ভাবে কারও সঙ্গে কথাও বলেননি। তবে প্রশাসনিক মহলের অনুমান ছিল, মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত থাকলেও থাকতে পারেন। কারণ, কপ্টার-দুর্বিপাকে আহত মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে থাকলেও তিনি স্বরাষ্ট্রসচিব গোপালিকাকে ডেকে পাঠিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, এমন কথা কেউ জানতেন না। বিশেষত, যখন দ্বিবেদীর মেয়াদ না-বাড়লে গোপালিকার নামই পরবর্তী মুখ্যসচিব হিসেবে সবচেয়ে আগে বিবেচিত হচ্ছিল। তাঁর সঙ্গে দৌড়ে আরও দু’একজন ছিলেন। কিন্তু তাঁরা অনেক পিছিয়েই ছিলেন। এখন অবশ্য তাঁদের কারওরই নাম নিয়ে আর জল্পনা বা আলোচনার অবকাশ নেই।

প্রসঙ্গত, দ্বিবেদীর মেয়াদ যাতে না-বাড়ে, তার জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি যে দ্বিবেদীর ‘পক্ষে’ নন, তা একাধিক বার প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন শুভেন্দু। বিবিধ অধিযোগও তিনি এনেছিলেন দ্বিদেবীর বিরুদ্ধে। এবং তা-ও প্রকাশ্যেই। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, অমিতের কাছেও তিনি বিষয়টি নিয়ে দরবার করেছিলেন। যদিও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বিষয়টি বারবারই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্যের কোনও আমলাকে নিয়ে বিরোধী দলনেতার অত ‘মাথাব্যথা’ও নেই। তবে রাজ্য বিজেপিরই একাংশের বক্তব্য, শুভেন্দু যে দ্বিবেদীর মুখ্যসচিব পদে মেয়াদবৃদ্ধি পছন্দ করবেন না, তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই। এখন দেখার, শুভেন্দু কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করেন কি না।

Advertisement

মুখ্যসচিব পদে হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর মেয়াদ বৃদ্ধি করে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি।

প্রসঙ্গত, অনেকে যদিও বলছেন দ্বিবেদীর মেয়াদ না-বাড়ানোর জন্য শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমলাদের মেয়াদবৃদ্ধির বিষয়টি কেন্দ্রের ‘পার্সোনেল’ মন্ত্রকের অধীন। সেটি আবার অমিতের অধীন দফতর নয়। ওই দফতর সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন। ফলে দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টিতে স্বয়ং মোদীর হস্তক্ষেপ আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন, কেন মোদী ওই সিদ্ধান্ত নিলেন। নয়াদিল্লি এবং রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয়ে ওয়াকিবহালরা বলছেন, ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ‘ট্রাই’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্রকে তাঁর প্রিন্সিপাল সচিব করে আনেন। কিন্তু মিশ্রকে ওই পদে আনার জন্য একটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) এনে আইন বদলের প্রয়োজন ছিল। নচেৎ মিশ্র ওই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ পদে আসতে পারতেন না। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সেই অধ্যাদেশটি সমর্থন করেছিলেন মমতা।

১৯৬৭ সালের ব্যাচের আইএএস মিশ্র উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের অফিসার। অধ্যাদেশটি সংসদে পাশ হওয়ার পর মোদী সরকারের পার্সোনেল মন্ত্রক মিশ্রের নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যাতে বলা হয়, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি না-হওয়া পর্যন্ত মোদী যত দিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, মিশ্র ততদিনই ওই পদে থাকবেন। ন’বছর আগের সেই ‘সাহায্য’ই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব পদে দ্বিবেদীর মেয়াদবৃদ্ধির ছাড়পত্র হয়ে ফিরে এসেছে। যদিও সরকারি বা আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কোনও সত্যতাই স্বীকার করা হয়নি। যেমন অসমর্থিত সূত্রের খবর, দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হলেও হয়ে থাকতে পারে।

মুখ্যসচিব পদে দ্বিবেদীর মেয়াদবৃদ্ধি প্রশাসনিক স্তরে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও এই সিদ্ধান্তের ‘রাজনৈতিক গুরুত্ব’ বেশি। যে হেতু শুভেন্দু বারবার দ্বিবেদীকে আক্রমণের নিশানা করছিলেন এবং তিনি কেন্দ্রের শাসক দলের সদস্য, তাই তাঁর সেই আক্রমণ বাড়তি ‘রাজনৈতিক গুরুত্ব’ পেয়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই এই মেয়াদবৃদ্ধিতে খানিক বাড়তি ‘উচ্ছ্বসিত’ তৃণমূল শিবির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement