কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ১ জানুয়ারি থেকেই ডিএ দেওয়া হবে, বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানাল অর্থ মন্ত্রক। প্রতীকী চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৪২ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) পাবেন চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ কথা জানিয়েছে। মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি বি কে মাথানের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত বছর ৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সম্মতি দিয়েছেন। তাই চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৩৮ শতাংশের বদলে ৪২ শতাংশ ডিএ পাবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ঘোষণার পরেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে। কারণ, গত বছর থেকে ডিএ-র দাবিতে চড়া সুরে তাঁরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে তাঁদের। বর্তমানে ৬ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, প্রাপ্য আরও ৩৬ শতাংশ ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজেদের দাবিতে অনড়। সেই সংঘাতের আবহেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করল নির্মলা সীতারামনের মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ ঘোষণার পর যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৪২ শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল। একই সঙ্গে রাজস্থান ও অসম সরকারও ৪২ শতাংশ ডিএ দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, অবসপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য ডিয়ারনেস রিলিফ (ডিআর)-ও দেওয়া হচ্ছে। কেবল পশ্চিমবঙ্গ সরকারই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দাবি মেটাতে অক্ষম। তাই আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে।’’
তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আন্দোলন করার অধিকার সকলের আছে। আন্দোলন করলে করা যেতেই পারে। কিন্তু আন্দোলন করে কী ফল পাওয়া যাচ্ছে? তাতে বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এর চাইতে অনেক ভাল হত, প্রতীকী আন্দোলন যা চলছিল, চলত। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা না করেই এক তরফা আন্দোলন করা হচ্ছে। এতে ফলও হচ্ছে না, আর আমজনতার কাজ হচ্ছে না। তাই আমি সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলিকে আন্দোলনের পথ পরিহার করতে অনুরোধ করছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে ভাবে অনড় অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে তাতে এক সময় কর্মসংস্কৃতি যেমন বিপন্ন হচ্ছে। তেমনই আন্দোলন নিস্ফলা হচ্ছে। অন্য রাজ্য ডিএ পাচ্ছে কারণ, তাদের অধিকাংশ রাজ্যে ডিএ-র আদেশনামা রয়েছে। বাম জমানায় আমরা সেই দাবি করেছিলাম। বামফ্রন্ট সরকার সেই দাবি মানেনি।’’
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনের দিন মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো চিরকুট পড়ে ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই ঘোষণার পর ২৪ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী, সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার অনুমোদিত স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, পঞ্চায়েত কর্মী, পুরসভা, পুর নিগম এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার। ১ মার্চ থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন কর্মীরা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ শতাংশ হারে ডিএ বাড়িয়েছিল মমতার সরকার। এ বারের বাজেটে আরও ৩ শতাংশ যুক্ত হয়েছে। তাই মার্চ মাস থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরাকরি কর্মীরা।
২৪ ফেব্রুয়ারির বিজ্ঞপ্তির পরেও ক্ষোভ কমেনি রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের। ডিএ-র দাবিতে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে দু’দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মীরা। ডিএ-র দাবিতে আগামী ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘট পালন করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, শহিদ মিনারে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ধারাবাহিক ভাবে ডিএ-র দাবিতে ধর্না দিয়েছে।
অন্য দিকে, গত ৩০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডের ধর্না কর্মসূচি থেকে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের ‘চোর-ডাকাত’ বলে আক্রমণ করেছেন। তার জবাবে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ ও রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি যৌথ ভাবে ফের ৬ এপ্রিল কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।