প্রকাশ্যেই ‘রামধোলাই’য়ের পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনায় দুর্নীতি হচ্ছে বুঝলেই দুর্নীতিবাজকে ‘রাম ধোলাই’ দেওয়ার নিদান দিলেন বাংলার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ মঙ্গলবার প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘‘মিথ্যা কথা বলার একমাত্র শাস্তি উত্তম মধ্যম। ওরা এলে, মিথ্যা কথা বললেই রাম ধোলাই দিয়ে গ্রাম থেকে বিদায় করুন।’’
প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা যোগ্য প্রাপকের থেকে ছিনিয়ে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে অযোগ্যদের মধ্যে— এমন অভিযোগে বাংলার বিরোধীরা সরব হয়েছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে ওই টাকা কখনও পৌঁছেছে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের হাতে। অভিযোগ, দোতলা বাড়ি রয়েছে, এমন অনেকের হাতেও গিয়েছে আবাস যোজনার টাকা। এ ব্যাপারে হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। এর মধ্যেই আবাস দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে ওই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার।
বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানীয়দের নিয়ে একটি সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন সুভাষ। সেখানেই এই মন্তব্য করেন তিনি। এমনকি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবাস যোজনায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এই অভিযোগ এনে সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানান। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় সাধারণ মানুষকে রেশনের মাধ্যমে চাল দিচ্ছেন। অথচ রাজ্যের মন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেছেন তিনি চাল দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে সমানে মিথ্যা কথা বলে চলেছেন।’’ এই প্রসঙ্গেই আর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আবাস দুর্নীতি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কম নয়। আবাস নিয়ে তৃনমূলে তৃনমূলে মারপিট চলছে। সাধারণ মানুষ পঞ্চায়েতে গিয়ে হামলা করছে।’’ বাংলার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘গ্রামে গিয়ে মিথ্যা কথা কেউ বললে তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে গ্রাম ছাড়া করুন’’।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে তৃনমূল। তৃনমূল পরিচালিত বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুভাষ সরকার বাংলায় থাকেন না। তিনি দিল্লিতে থাকেন। মাঝেমধ্যে রাজ্যে এসে এই সমস্ত কথা বলে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা কছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে তাঁদের রাগ বাড়ছে। সেই রাগই এইভাবে প্রকাশ করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।’’।
অন্যদিকে দুর্নীতি নিয়ে সরব সুভাষের নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সুপারিশেই বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানার পরিবারের সদস্যরা কল্যাণী এমসে নিয়ম ভেঙে চাকরি পেয়েছেন। তিনি কি না দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন!’’ শান্তনু আরও বলেন, ‘‘বিজেপি বরবারই হিংসার রাজনীতি করে এসেছে। যে ভাষায় তারা বুকে পা তুলে দেওয়ার কথা বলে, ত্রিশূলে রক্ত মাখানোর কথা বলে, সেই ভাষাতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও কথা বলেছেন। এতে বিস্মিত হচ্ছি না।’’