বিতর্ক তো জারি আছেই। কিন্তু সংখ্যা কার দিকে? এই প্রশ্ন সামনে রেখেই আজ, শুক্রবার থেকে কলকাতায় শুরু হচ্ছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক।
দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে এত দিন সংখ্যার জোরে ছড়ি ঘোরাতেন প্রকাশ কারাটই। তিন বছর আগে পার্টি কংগ্রেসে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েও শীর্ষ কমিটিতে সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন সংখ্যালঘু। কিন্তু গত কয়েক মাসে বদল এসেছে সিপিএমের অন্দরের ছবিতে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের নেতৃত্বে বিজেপি যত আগ্রাসী রাজনীতি শুরু করেছে, ততই বিভিন্ন রাজ্য থেকে সিপিএমের মধ্যে ইয়েচুরির উদারপন্থী লাইনের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যার জেরে কয়েক মাস আগে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কারাট শিবিরের চেয়ে সামান্য সমর্থন বেশি পেয়েছিলেন ইয়েচুরি। দুই শিবিরের এই তুল্যমূল্য সংখ্যার বিচার মাথায় রেখেই কলকাতার বৈঠকে সরাসরি ভোটাভুটি এড়াতে সচেষ্ট দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনের উপরে দু’টি খসড়া দলিল এ বার কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ হবে। বিজেপি যে আগের যে কোনও শাসক পক্ষের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক, সেই প্রশ্নে এখন ঐকমত্য এসেছে কারাট ও ইয়েচুরি শিবিরে। কিন্তু বিজেপি-র এই বিপদ মোকাবিলায় বৃহত্তর গণতান্ত্রিক জোট গড়ে কংগ্রেসের সঙ্গেও যাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিমত এখনও বহাল। দু’টি খসড়া সেই কারণেই। কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যের নেতারা চাইছেন, পার্টি কংগ্রেসেও ফের সেই জোড়া দলিল নিয়ে না গিয়ে কলকাতার বৈঠকেই বিতর্কের চূড়ান্ত ফয়সালা হোক। তার জন্য প্রয়োজনে ভোটাভুটি হলেও হয়ে যাক! কিন্তু পলিটব্যুরো আবার এতটা বিভাজন প্রকট করে তুলতে চাইছে না।
বৈঠকে যোগ দিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অনেকেই বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। আলিমুদ্দিনে ঢোকার মুখে এ দিন জোড়া খসড়া নিয়ে প্রশ্ন শুনে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরু হচ্ছে কাল (শুক্রবার)। সেখানে আলোচনা করেই যা করার, করা হবে।’’ বাংলা-কেরল-ত্রিপুরার বাইরে নানা রাজ্যে ঘুরে সাম্প্রতিক কালে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক জোটের লাইনের পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন সাধারণ সম্পাদক নিজে। ইয়েচুরিপন্থীদের আশা, কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যার অভাবে এ বার হার মানতে হবে না তাঁদের!