উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
এনপিআর নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, এনপিআর-এ বাবা-মায়ের জন্ম বৃত্তান্তের নথি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলে কেন্দ্র যা বলছে, লিখিত আবেদনপত্রের সঙ্গে তা মিলছে না। তাই তাঁর দাবি, আবেদনপত্রের এ সংক্রান্ত অংশ প্রত্যাহার করতে হবে।
সেই সঙ্গেই বিজেপি শাসিত অসম, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মণিপুর ও মেঘালয় সহ দেশের বিজেপি-বিরোধী সব মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতার আহ্বান, ‘‘আবার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলছি। কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা বৈঠকে আপনাদের সঙ্গে চালাকি করা হয়েছে।’’ এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা চাইলে কলকাতায় আমরা এ ব্যাপারে বৈঠক ডাকতে পারি।’’
‘উত্তরবঙ্গ উৎসব’-এর সূচনা করতে এদিন শিলিগুড়িতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানেই এনপিআর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ‘চালাকি’র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এনপিআর-এর ফর্মে বলা রয়েছে বাবা মায়ের জন্মের শংসাপত্র, দিনক্ষণ দিতে হবে। আবার বলা হচ্ছে, ওই তথ্যগুলি না কি বাধ্যতামূলক নয়।’’ মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পরীক্ষার মার্কশিটে প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে কোনওটিতে যদি নম্বর লেখা না থাকে তাহলে কি সেই পরীক্ষার্থীকে পাশ বলে ধরা হবে, নাকি বলে দেবে ওই ঘরটি পূরণ হয়নি বলে ফল অসম্পূর্ণ?’’ তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের জন্ম সংক্রান্ত তথ্য না থাকলেও তা অসম্পূর্ণ বলে ধরা হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘যে কেন্দ্রের কথায় যে যা বোঝার বুঝুক। আমি বুঝব না। আমি কেবল বুঝি, যে নথিপত্রে যা থাকবে, তাই ধরে নেওয়া হবে। লিখিতভাবে যদি ওই কলম বা শর্ত সেখানে থেকে থাকে, তা যতক্ষণ না তোলা হচ্ছে, ততক্ষণ তা আইনত গ্রাহ্য বলেই ধরা হবে। এটা বোঝার মত বুদ্ধি সকলেরই রয়েছে। দেশে যা চলছে তা ঠিক নয়।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘আমার সঙ্গে বাংলার ১০০% মানুষ রয়েছে। কে কি বলল, তাতে কিছু যায় আসে না।’’
আরও পড়ুন: সিএএ বিরোধী প্রস্তাব আসছে এ রাজ্যেও
নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বুধবার পাহাড়েও পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে মমতার। সেই সঙ্গে ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বিকেলেই দার্জিলিং পৌঁছেছেন তিনি।
এনপিআর নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আরও একবার সমর্থন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেক রাজ্যই অনেক কথা বলল। আবার বৈঠকেও চলে গেল। আমি একা গেলাম না। তবু তো একজন প্রতিবাদ করেছে। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে। মানুষের বিরুদ্ধে কোনও কাজ আমি করতে দেব না।’’ এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি শুধু ভোটের সময় আসি না। আমি সারা বছর আপনাদের পাহারাদার।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘অসমের পর অন্য কোনও রাজ্যে যদি এনআরসি ’র প্রয়োজন থাকে তবে তা পশ্চিমবঙ্গ। ১ কোটির উপরে অনুপ্রবেশকারী আমাদের রাজ্যে বসে শুষে খাচ্ছে। ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ১ কোটি অবাঞ্ছিত লোক কোনও রাজ্যে থাকলে তা বিরাট সমস্যা।’’ এরই পাশাপাশি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে মমতার আহ্বান সম্পর্কে দিলীপবাবুর কটাক্ষ, ‘‘উনি আগেও এই চেষ্টা করেছিলেন। লাভ হয়নি।’’