ঘরে ঘরে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পে সম্প্রতি টাকা ছেড়েছে কেন্দ্র। ফাইল ছবি
নামের মহিমা কতটা ‘অর্থ’-বহ, এক জল প্রকল্পেই তা যেন জলবৎ হৃদয়ঙ্গম হয়েছে নবান্নের! কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বাংলায় বরাদ্দের জোগান বন্ধ রাখলেও ঘরে ঘরে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পে সম্প্রতি টাকা ছেড়েছে তারা। কেন্দ্র ওই প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘জল জীবন মিশন’, কিন্তু এ রাজ্যে তা পরিচালিত হচ্ছিল ‘জলস্বপ্ন’ নামে। সেই নাম ছেড়ে কেন্দ্রীয় নামে ফেরার উদ্যোগ শুরু হওয়ার পরে টাকা আসতে থাকায় কিছুটা হলেও যেন আশার আলো দেখছে রাজ্য।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখার পরে অতি সম্প্রতি জল প্রকল্পে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। আগামী দিনে বরাদ্দ জোগানের পথ মসৃণ রাখতে এই প্রকল্পে এ বার কেন্দ্রীয় নাম ফেরানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরেও। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আটকে থাকা টাকা ছাড়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি সরাসরি আবেদন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে।
নবান্ন সূত্রের দাবি, প্রকল্পটি নিয়ে জেলায় জেলায় বৈঠক করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। সেই সব বৈঠকে লিখিত ভাবে না-হলেও মৌখিক ভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে, এ বার থেকে ওই প্রকল্পে রাজ্যের দেওয়া ‘জলস্বপ্ন’ নামটির বদলে কেন্দ্রীয় নাম ‘জল জীবন মিশন’-ই ব্যবহার করতে হবে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষদের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই সব বিষয়ে রাজ্য সরকার আর কোনও রকম ‘ঝুঁকি’ নিতেই চাইছে না। আবাস প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ‘বাংলা আবাস যোজনা’র বদলে স্থায়ী ভাবে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ নামটি ফিরিয়ে আনছে নবান্ন। ‘ভুয়ো’ উপভোক্তা ও ‘দোষী’ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআরের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপও করতে হচ্ছে। ফেরাতে হচ্ছে ‘বেহাত’ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের উপভোক্তা-অর্থও।
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বন্ধ থাকার পিছনে এই নাম বদলের বড় ভূমিকা ছিল বা আছে বলে অভিযোগ। এখন কেন্দ্রীয় নামে ফিরে গিয়ে ‘ত্রুটি সংশোধন’-এর চেষ্টা চললেও আটকে থাকা টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের দুশ্চিন্তা পুরোপুরি কাটেনি। জল প্রকল্পে অর্থের জোগান চালু হওয়ায় তারা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ অংশিদারিতে (৫০:৫০) বাংলায় ‘জলস্বপ্ন’ নামে ৫৮ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প চালু হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, ২০২৪-এর মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নলবাহিত পানীয় জল দেওয়া হবে। কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ১.৬০ কোটি পরিবারে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে হবে। এ-পর্যন্ত প্রায় ৪৭.৩৭ লক্ষ পরিবারে তা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, কোভিডের দাপটে মাঝখানে প্রকল্পের কাজ বাধা পেয়েছিল। তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে তৃণমূল সরকার এই প্রকল্পের উপরে বাড়তি নজর দিয়েছে। গতি বাড়াতে মুখ্যসচিব আলাদা ভাবে নজরদারি চালাচ্ছেন জল প্রকল্পে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দের প্রশ্নে এই প্রকল্পের পরিণতি একশো দিনের কাজ, আবাস বা সড়ক যোজনার মতো হলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে সেটা মোটেই সুখকর হত না। সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশার অন্যতম প্রধান বিষয়ই হল জল। সেই প্রকল্পে নতুন করে টাকা পাওয়ায় সরকার কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছে।
তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জল প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। ২০০৯-এ সেই প্রকল্পের নাম হয় ‘ন্যাশনাল রুরাল ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্রোগ্রাম’। এখন প্রকল্পটি ‘জল জীবন মিশন’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। শেষ বার নামকরণের আগে কেন্দ্রে শাসক দল বদলে গিয়েছেল।