প্রতীকী ছবি।
রাজকোষ থেকে কোনও বাড়তি বরাদ্দ নয়। তার বদলে গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের বন্দোবস্ত করতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আগামী ছ’মাসের বরাদ্দ বাবদ রাখা ৫০ হাজার কোটি টাকা আগামী চার মাসে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ নামের এই প্রকল্পের জন্য দেশের ছ’টি রাজ্যের ১১৬টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যে সব জেলায় বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা নেই। অথচ পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যের জেলা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা নেই কেন?
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, যে সব জেলায় অন্তত ২৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন, সেগুলিকেই এই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ৩১ মে পর্যন্ত বাংলায় তেমন কোনও জেলা ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও হিসেব কষছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে প্রথম থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের বিবাদ চলছিল। সেই কারণেই কি রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে উৎসাহ দেখায়নি?
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব নগেন্দ্র নাথ সিন্হা বলেন, ‘‘১৫ জুন পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ তখনও হিসেব কষছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা এখনও বাংলায় জেলায় থিতু হননি। যে সব জেলায় অন্তত ২৫ হাজার শ্রমিক ফিরেছেন, সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনও জেলায় ওই সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরলে, তারা এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারে। কোনও বাধা নেই।’’
বিহারের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক রুটিরুজি হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। সেখানে আবার সামনেই বিধানসভা ভোট। সে কারণে শনিবার সকালে মোদী বিহারের খগড়িয়া জেলার তেলিহার গ্রাম থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অভিযান চালু করবেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও অন্য পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দেবেন। মোদী সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ১ কোটির বেশি পরিযায়ী শ্রমিক লকডাউনের পরে গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। এর তিন ভাগের দু’ভাগ, অর্থাৎ প্রায় ৬৭ থেকে ৭০ লক্ষ শ্রমিকের জন্য আগামী ১২৫ দিন বা প্রায় চার মাস রোজগারের বন্দোবস্ত করা হবে এই প্রকল্পে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামোন্নয়ন, পঞ্চায়েতি রাজ, সড়ক, খনি, পানীয় জল, নিকাশি, কৃষির মতো বিভিন্ন মন্ত্রকের বাজেটে গ্রামের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। আগামী ছয় মাস বা এক বছর ধরে সেই টাকা খরচ করা হত। সেই বরাদ্দ করা অর্থ থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা আগামী চার মাসে খরচ করে ফেলা হবে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রামের বাড়ি তৈরি, জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ, পঞ্চায়েত ভবন তৈরি, কুয়ো-পুকুর খননের মতো ২৫ রকমের কাজে জোর দেওয়া হবে। গ্রামে স্থায়ী সম্পদও তৈরি হবে।
প্রশ্ন উঠেছে, লকডাউন তুলে নেওয়ার ফলে শহরে কারখানা খুললেও পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ গ্রামে ফিরছেন।এখন সরকার কেন চার মাসের জন্য গ্রামে রোজগারের বন্দোবস্ত করছে? তাতে কি কারখানায় শ্রমিকের অভাব হবে না? সীতারামন বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য গ্রামে ফেরা শ্রমিকদের এখনই কিছু রোজগারের বন্দোবস্ত করা। চার মাস পরে কেউ কাজে ফিরে যাবেন, কেউ থেকে যাবেন। আমি শিল্পমহলের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তারা ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমিক নিয়ে কাজ করছে। যত সময় এগোবে, দেখা যাবে, কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের ডেকে পাঠাচ্ছেন বা অন্য কিছু ভাবছেন।’’ কিন্তু গ্রামেও রোজগারের সুযোগ মিললে কারখানায় মজুরি বেড়ে যাবে না তো? শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার বলেন, ‘‘পঞ্জাবে দেখা গিয়েছে, কারখানার মালিকেরা ট্রেনের টিকিট কেটে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনছেন। এই প্রকল্পের ইতিবাচক ফলই মিলবে।’’