নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মতো বাংলায় ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র তদন্তে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। বৃহস্পতিবার কলকাতার মানিকতলা এবং ভাটপাড়ার কুলিডিপো এলাকায় যাওয়ার পর শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বলরামপুর ও বাঁকুড়ার কোতলপুর এলাকায় গেলেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
এ দিন বিকেলে সিবিআইয়ের একটি দল গিয়েছিল মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের উস্তি থানার বলরামপুরে। সেখানে গত ৩ মে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন সৌরভ বর (২২)। তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে এলাকা পরিদর্শন করেন তদন্তকারীরা। পরিবারের সদস্যদের বয়ানও ভিডিয়ো করা হয়। ওই সময়ে আরও একটি দল পৌঁছে গিয়েছিল বাঁকুড়ার কোতলপুর থানার রায়বাঘিনি গ্রামে। গত ৯ মে গ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল কুশ ক্ষেত্রপাল নামে এক ব্যক্তির দেহ। তাঁর পরিবারের সঙ্গেও এ দিন কথা বলে পুকুর ও সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন অফিসারেরা।
ভোটের ফলপ্রকাশের পর শাসক দলের বিজয় মিছিল চলাকালীন সৌরভকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে গুলি করে খুন করা হয় বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল বলরামপুরের ওই পরিবার। সৌরভকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন তাঁর বাবা, দাদা ও জেঠুও। ওই ঘটনার পর রাতে তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। পরিবারের বক্তব্য, বিজেপি-কে ভোট দেওয়ার জন্যই সৌরভকে খুন করেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। অন্য দিকে, সমস্ত অভিযোগই খারিজ করে মৃতকে নিজেদেরই কর্মী বলে দাবি করেছিল শাসক দল। সেই সময় মৃতের পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদানও তুলে দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা।
রায়বাঘিনি গ্রামে কুশ ক্ষেত্রপালের বাড়িতে গিয়েও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন তদন্তকারী সংস্থার আরেকটি প্রতিনিধি দল। মা বন্দনা ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা ছেলের খুনের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে চান। কাদের উপর আমাদের সন্দেহ রয়েছে, সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমি তাঁদের সব জানিয়েছি। আশা করি এ বার আমার ছেলের মৃত্যুর সুবিচার পাব।’’ গত মে মাসের ৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিলেন কুশ। তিন দিন পর গ্রামেরই একটি পুকুরের কাছে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, বিজেপি-র হয়ে কাজ করার জন্যই তাঁকে খুন করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দাস থানার নাড়রা গ্রামে অরুপ রুইদাস নামে এক বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়ে। এ দিন অরূপের বাড়িতে গিয়েও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা।
বাংলায় ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’-র ঘটনায় খুন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত মোট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের সূত্রেই খবর, দায়ের হওয়া এফআইআরে খুন, খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইন, অনধিকার প্রবেশ, অপহরণ এবং ধর্ষণের মামলা রয়েছে।