সিবিআইয়ের চোখে রাজীব কুমার এখন ‘পলাতক’। —ফাইল চিত্র।
হাজিরা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বার বার নোটিস পাঠাচ্ছেন। কিন্তু সেই সব নোটিস উপেক্ষা করে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে গিয়েছেন রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমার। সিবিআইয়ের চোখে তিনি এখন ‘পলাতক’। গত ১০ দিন ধরে রাজীব কুমার এবং সিবিআইয়ের মধ্যে যেন ‘চোর-পুলিশ’ খেলা চলছে!
তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কলকাতায় থেকেই নিজের আস্তানা বার বার বদল করছেন বলে মত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। কত দিন তিনি এ ভাবে লুকিয়ে থাকবেন? এখন সেটাই দেখতে চাইছে সিবিআই।
সরকারি ভাবে রাজীবের ছুটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বুধবার, এমনটাই সিবিআইয়ের চিঠির জবাবে জানিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু রোজভ্যালি-কাণ্ডে নোটিসের জবাব দিতে গিয়ে রাজীব কুমার দাবি করেছেন, তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ঠিক কত দিনের ছুটিতে রয়েছেন? ২৫ না ৩০ সেপ্টেম্বর? এ প্রশ্ন তুলে ফের রাজ্য প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠাতে চলেছে সিবিআই। এমনটাই খবর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে।
আরও পড়ুন: এ বার আগাম জামিনের আবেদন হাইকোর্টে, রোজভ্যালি-কাণ্ডে সময় চাইলেন রাজীব
তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষেও কী রাজীব কুমার রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে ‘অন্তরালে’ থাকবেন? নাকি কাজে যোগ দেবেন? কাজে যোগ না দিলে, প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবে? রাজীব কুমারকে ঘিরে এমনই নানা সম্ভাবনা নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনিক স্তরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: ওকালতনামায় নিজেই সই করছেন, তবু রাজীবের খোঁজ পাচ্ছে না সিবিআই
রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্র সচিব অলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে সিবিআই এর আগে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিল, রাজীব কুমারকে কোথায় পাওয়া যাবে? তিনি ছুটিতে রয়েছেন কি না? জবাবে, রাজীব কুমার ৯ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন বলে সিবিআইকে জানানো হয়। এর থেকে বেশি কিছু জানাতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন। সিবিআইয়ের চিঠির বিষয়টি তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা কুমারকেও জানিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের তরফে। এত কিছুর পরেও রাজীব কিন্তু অন্তরালেই রয়ে গিয়েছেন। সিবিআইয়ের পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের কাছেও এখন বড় প্রশ্ন, ছুটি শেষ হলে রাজীব কি কাজে যোগ দেবেন? এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।
কোনও আইপিএস অফিসার রাজ্যের বাইরে গেলে, তিনি কোথায় যাচ্ছেন সেই ‘লোকেশন’ কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা। রাজীব এ ক্ষেত্রে ডিজিকে জানাবেন। ছুটিতে থাকার সময় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার ল্যান্ড বা মোবাইল নম্বর সক্রিয় থাকাও জরুরি। সিবিআইয়ের চিঠির জবাবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও জবাব দিতে পারেনি নবান্ন। পুলিশ মহলের একাংশ জানাচ্ছে, এ সব ক্ষেত্রে কোনও অফিসার যদি ‘সার্ভিস রুল ব্রেক’ করেন, তা-হলে তাঁকে শো-কজ করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। রাজীবের ক্ষেত্রে এমনটা করা হতে পারে বলে মত ওই অংশের।
সিবিআইয়ের একটি সূত্রে খবর, রাজীবকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি, তাঁর ই-মেলও কাজ করছে না। গোয়েন্দাদের অনুমান, কখনও তিনি মোবাইলের সিম বদলে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কখনও আবার ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি)-এর মাধ্যমে ফোন করছেন। এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলার একটি মাধ্যম। ভিডিয়ো এবং অডিও দুই মাধ্যমেই ফোন করা যায়। ইন্টারনেটে বিভিন্ন সফটওয়ার পাওয়া যায়। সে সব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন রাজীব কুমার। এমনটাই মত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলে আইপিএস মহলে পরিচিত রাজীবের চক্রবূহ্য ভেদ করতে সিবিআইও চেষ্টার খামতি রাখছে না। রাজীবকে ধরতে সিবিআই বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে প্রতিদিনই তল্লাশি চালাচ্ছেন। প্রতিটি দলই পরিচালিত হচ্ছে সিজিও কমপ্লেক্সের বিশেষ কন্ট্রোল রুম থেকে। কোন দলকে কোথায় যেতে হবে, ওই কন্ট্রোল রুম থেকেই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। রাজীব কিংবা সিবিআই, কেউ কাউকে জমি ছাড়তে নারাজ। আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে আগাম জামিনের আবেদনে রাজীবের সই রয়েছে জানার পর পুলিশ মহলের একাংশ মনে করছেন, সিবিআইকে যেন তিনি সরাসরি ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ওই আবেদনে তাঁর স্ত্রীও সই করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। রাজীব নিজেই সই করেছেন, এবং সব কিছু জেনেশুনেই। এখন দেখার ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি কী করেন।”